পার্টিতে গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণী ধর্ষিত
বন্ধু সাদনান সাকিফের প্ররোচনায় জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণী ধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় বনানী থানায় মামলা হয়েছে। সাদনান সাকিফ, সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে শনিবার রাতে এ মামলা করেন ধর্ষিত এক তরুণী। মামলা নম্বর আট। এর মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত সাফাত আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে। বাকি দু’জনের মধ্যে একজন প্রভাবশালী এক নেতার ছেলে, অন্য জনের পরিচয় জানা যায়নি। সাফাতের ড্রাইভার বিল্লাল ও দেহরক্ষীকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।প্রথমে মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করে। কিন্তু প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর মামলা নেয় বনানী থানা পুলিশ। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২৮ মার্চ বনানীর দ্য রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে তারা ধর্ষণের শিকার হন। সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ নামে দু’জন তাদের সারা রাত হোটেলের দুটি কক্ষে অস্ত্রের মুখে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছে ধর্ষকরা। এখন ওই ভিডিও প্রকাশসহ তাদের খুন ও গুম করার হুমকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে ধর্ষকরা। এ বিষয়ে পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দুই তরুণীর অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এক তরুণী যুগান্তরকে বলেন, তারা বুঝতেই পারেননি সাদনান তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করবে। সাদনান তাদের বন্ধু। সাফাত এবং নাঈমের সঙ্গে সাদনানের মাধ্যমেই তাদের পরিচয় হয়। ঘটনার দিন বারবার ফোন করে তাদের রেইনট্রিতে নেয়া হয়। রাত ২টা পর্যন্ত সাদনান তাদের সঙ্গে ছিল। পরে সে (সাদনান) তাদের সেখানে রেখে চলে আসে। আগে থেকেই ওই হোটেলে দুটি কক্ষ বুক করে রেখেছিল সাফাত ও নাঈম। দুই তরুণীকে সেখানে রাতভর আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করা হয়। এমনকি শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। পরদিন সকালে দু’জনকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওই তরুণী বলেন, সাদনানের মাধ্যমে সাফাতের সঙ্গে আগে পরিচয় থাকলেও নাঈমকে তারা চিনতেন না। ওইদিনই নাঈমকে প্রথম দেখেছেন। ঘটনাটি জানলেও আত্মসম্মানসহ ধর্ষকদের ভয়ে শুরুতে কিছুই করতে চায়নি পরিবার। প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান ধর্ষক সাফাত ও নাঈম তাদের ভিডিও প্রকাশসহ নানা ধরনের হুমকি দেয়ায় তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরে বাধ্য হন।
ওই তরুণী বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছেন সাফাত ও নাঈম ইয়াবা আসক্ত। তারা গুলশান, বনানী এবং বারিধারায় বিভিন্ন হোটেলে নিরীহ তরুণীদের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে। বিশেষ করে অনেকেই বিশ্বাস করে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পার্টিতে যায়। সেখানে কৌশলে নেশা করিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং তার ভিডিও ধারণ করে। কোনো একপর্যায়ে সেই ভিডিও প্রকাশ করে দেয়ার নামে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে। অন্যদের মতো তাদের ঘটনাটিও ছিল পরিকল্পিত বলে উল্লেখ করেন দুই তরুণী।
তারা বলেন, রাতের ঘটনা অন্যদের না জানানোর জন্য অস্ত্রের মুখে হুমকি দিয়েছে ধর্ষকরা। এ সময় তারা বলে, এর আগেও অনেকের সঙ্গে এ ধরনের কাজ করেছে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি। যারা মুখ খুলেছে তাদের গুম করে দেয়া হয়েছে। তারা (দুই তরুণী) যদি মুখ খোলে বা র্যাব-পুলিশকে জানায়, তবে তাদেরও এমনই পরিণতি হবে।
এদিকে হোটেল রেইনট্রির চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার মো. শরীফুল আজম এলাহী যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার দিন সাফাতের জন্মদিন ছিল। এ উপলক্ষে তারা পার্টির আয়োজন করে। ওইদিন সাফাত ও নাঈম দুটি কক্ষ বুক করে। কিন্তু সেখানে জোরপূর্বক কোনো কিছু ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। এছাড়া তারা যে ফ্লোরে কক্ষ ভাড়া নিয়েছিল সেখানে আরও তিনটি কক্ষে অতিথি ছিল। সেখানে জোরপূর্বক কিছু হলে তারা তো আমাদের কিছু বলত।
অস্ত্র নিয়ে সাফাত ও নাঈম ভেতরে প্রবেশ করেছে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে অস্ত্র নিয়ে কেউ প্রবেশ করতে গেলে আর্চওয়ের মেটাল ডিটেক্টরে ধরা পড়ার কথা। ওই দিন এমন কিছু ধরা পড়েনি। তিনি আরও দাবি করেন, ঘটনার পরদিন সকালে দুই তরুণী হাসিমুখে বের হয়ে গেছেন। যদি জোর করে কিছু হতো তারা হাসিমুখে বের হতেন না।
কক্ষ বুকিংয়ের সময় বিস্তারিত পরিচয় নেয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা শুধু ভিজিটিং কার্ড এবং মোবাইল নম্বর রেখেই হোটেল বুকিং দেই। সেখানে সাফাতের ভিজিটিং কার্ডের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি তিনি আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে। আর নাঈম ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার ছেলে। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় জানা নেই বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে সাদনান ও নাঈমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। সাদনান ফোন রিসিভ করেননি। অপরদিকে নাঈমের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। সাফাতের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। শনিবার বারবার ফোন দেয়ার পরও তিনি রিসিভ করেননি।