বাংলাদেশি নারী প্রতিনিধির সঙ্গে সাংবাদিকের এ কেমন আচরণ ফিফায়
ফিফার কাউন্সিলে এশীয় ফুটবল কনফেডারেশনের নারী প্রতিনিধি হিসেবে মাহফুজা আক্তার কিরণ নির্বাচিত হয়েছেন। কিরণের দেশ আবার বাংলাদেশ। তাতেই কিনা বিদেশি সাংবাদিকরা একটু বেজার হলেন। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বিবিসির সাংবাদিক ম্যানি জাযমি এমন একটি প্রশ্ন করলেন, যা স্কুলের বাচ্চাদের করা হয়। কিরণ সেই প্রশ্ন ঠিকমতো শুনতে পেলেন না। তাতে উত্তরটাও তার ঠিকমতো হলো না। ব্যস, জনৈক সাংবাদিক সেটাকে হাতিয়ার করে অপেশাদারিত্বের চূড়ান্ত উদাহরণ দিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।
কিরণকে আচমকা প্রশ্ন করা হয় বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নারী দল কোনটি।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক উত্তরদাতাকে কী ধরনের প্রশ্ন করবেন, তার প্রাতিষ্ঠানিক ধরাবাঁধা নিয়ম হয়তো নেই। কিন্তু নৈতিকভাবে অবশ্যই কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। কিরণ ওই সময় বয়স ভিত্তিক ফুটবল নিয়ে আলোচনা করছিলেন। প্রাসঙ্গিক বিষয় এড়িয়ে তাকে বিশ্বকাপ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। কিরণ প্রাথমিকভাবে ভেবেছিলেন, হয়তো তিনি বয়স ভিত্তিক ফুটবল নিয়েই প্রশ্ন করছেন।
ওই ঘটনার কথা উল্লেখ করে কিরণ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘সেসময় উদ্বেগের মধ্যে থাকায় প্রশ্নটি ভাল মতো শুনতে পাইনি। প্রথমে ভাবছিলাম সে এইজ লেভেল (বয়সভিত্তিক ফুটবল) জিজ্ঞেস করছে। কারণ আমি সেটা নিয়েই কথা বলছিলাম।’
বিবিসির সাংবাদিক ম্যানি জাযমি টুইট করেন, ‘নির্বাচিত হওয়ার পর মাহফুজা কিরণকে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন নারীদের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কে? প্রথমে বলেন নর্থ কোরিয়া। ভুল ধরিয়ে দিলে, মাহফুজা কিরণ জাপানের নাম বলেন, তারপর আমতা আমতা করে উত্তর দেন ইউএসএ।’
কিরণের ভুল নিয়ে টুইট করেছেন অন্যরাও। ব্যঙ্গ করে জাযমি নামের একজন লিখেছেন, ‘২/১, অর্থাৎ দুবার ভুল করে সঠিক উত্তর।’
শেইখা আল খলিফা নামে একজন টুইটারে লিখেছেন, ‘এই ফলাফলে আমি বিস্মিত। এখন মনে হচ্ছে আমি নিজেও এর চেয়ে ভালো প্রার্থী হতাম।’
শেলি জেফরি নামের একজন আরও এক ধাপ এগিয়ে লিখেছেন, ‘বিশ্বকাপ কী বস্তু সেটাই তার জন্য হয়তো সহজ প্রশ্ন হতো।’
ব্যঙ্গাত্মক এই সব আলোচনা আবার ফলাও করে প্রচার করছে বিবিসি।
কিরণ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি ময়া ডডকে ১০ (২৭-১৭) ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে ফিফার কোনও কমিটিতে নির্বাচিত হওয়া প্রথম নারী। এ কারণেই তার বিরুদ্ধে এসব ঘটনা তৈরি করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
‘এটা খুবই স্বাভাবিক, আপনার বুঝতে হবে, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ময়া ডড। গত তিনবছর ধরে একজন সদস্য হিসেবে তিনি ওখানে ছিলেন। তিনি যখন হেরে গেছেন, স্বাভাবিক কারণে তার সমর্থনে যেসব মিডিয়া রয়েছে, তারা তো তার পক্ষেই কাজ করবে। এর বাইরে কিছু নয়।’ বলছিলেন কিরণ।
কিরণের সঙ্গে বিবিসি সাংবাদিকের এমন আচরণের পর প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কোনও ইউরোপীয় প্রতিনিধির সঙ্গে তিনি এমন করতে পারতেন কি না। আর করলেও নিজের পেশা-সংশ্লিষ্ট ব্যাপার নিয়ে এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৈ-চৈ করতেন কি না। হলফ করে বলা যায় জনৈক সাংবাদিক এই সাহস পেতেন না। সেই সাহসটা তিনি পেয়েছেন যুগযুগ ধরে চলে আসা অবচেতন কিংবা চেতন মনের এক ধরনের ‘বৈষম্যমূলক মতবাদ’ থেকে। সেটা বর্ণবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়!