নারীর অগ্রগতির আরেক প্রমাণ
‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নারী ও পুরুষকে এভাবেই দেখেছেন। তবে বাংলাদেশের কর্মসংস্থানে বাংলাদেশের নারীরা কবি প্রত্যাশার চেয়ে একটু বেশিই করে ফেলেছেন। সর্বশেষ করা দুই বছরের জরিপে দেশের পুরুষদের চেয়ে নারীদের কর্মসংস্থানের বেশি বলে তথ্যে পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, দেশে এখন ১৫ বছরের বেশি বয়সী শ্রমশক্তিতে থাকা মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৬১ লাখ। তাদের মধ্যে চার কোটি ৮১ লাখ পুরুষের বিপরীতে নারী পাঁচ কোটি ৬০ লাখ। আর দেশে এখন মোট বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত পরিসংখ্যান ব্যুরো যে জরিপ করেছে তাতে যে ১৪ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের তথ্য পাওয়া গেছে তার নয় লাখই নারী। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নারী উন্নয়নে ব্যাপক সক্রিয়। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে নারী। কাজেই কর্মসংস্থানে নারীদের এগিয়ে যাওয়া মোটেই আর্শ্চযের কিছু নেই। কৃষিতে ও গৃহস্থালীর কাজে নারীদের অবদানের বিষয় জরিপ বা মূল্যায়নের মাপকাঠিতে ফেললে, ওই সংখ্যা আরও অনেক অনেক বেশি হবে বলে আমরা মনে করি। তবে দেশে কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার সময়ে নারীর নিরাপত্তা বাড়াতে হবে এবং সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনতে পারলে অবস্থার আরও পরিবর্তন হবে। বিগত দুইদশকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে দেশের আইনী কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে এবং সরকারি বেসরকারি নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা ইতিবাচক। তারপরও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতনের ঘটনা আমাদের থমকে দেয়। আরেকটি বিষয় না বললেই না, নারী পুরুষের মজুরি বৈষম্য। আগের চেয়ে শ্রমিকদের মজুরি কিছুটা বেড়েছে, বেড়েছে নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মজুরি বৈষম্যও। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র নারী শ্রমিকদের সংগঠিত হয়ে দাবি আদায়ে আন্দোলনের সুযোগ নেই, সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে সমাধানের। নারী শ্রমিকদের জন্য মজুরির সমতা নির্ধারণ করে নিশ্চিত করতে হবে নারীর কাজের মর্যাদাও। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা আশা করছি।