বখাটেদের উৎপাতে অতিষ্ঠ টঙ্গীর সাধারন মানুষ, নিরব প্রশাসন
বি এম শফিকুল ইসলাম টিটু, নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীতে দিন দিন বাড়ছে সামাজিক অপরাধ। তুচ্ছ ঘটনায় ঘটছে হতাহতের ঘটনা। শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউ রেহাই পাচ্ছে না। তরুন, কিশোর আর যুবকবখাটেদেও দৌরাত্ম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে বিরাজ করছে আতংক। এরসাথে প্রতিনিয়ত ঘটছে ইভটিজিং ও ধর্ষনের মত ঘটনা। বাড়ছে ছিনতাই, খুন আর উত্তেজনা। হাত বাড়ালেই ইয়াবা, গাজা, ঘুমের বড়ি, মদ ও বিভিন্ন নেশা জাতীয় ইনজেকশন পাওয়া যাচ্ছে সর্বত্রই। অধিকাংশ বখাটে কোন না কোন প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় বেশির ভাগ ঘটনায় মুখ খুলতে সাহস পায় এলাকার সাধারন মানুষ। বাড়ছে হত্যার মিছিল আর অসামাজিক কার্যকলাপ।
টঙ্গীর খরতৈল এলাকায় গত ১৮ মে আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। শিশুটির বাবা রিকশাচালক আর মা স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার কর্মী। ঘটনার দিন সকালে শিশুটিকে বাসায় রেখে মা-বাবা কাজে যান। এই সুযোগে মাহফুজ (১৭) নামের অন্য ভাড়াটিয়া শিশুটিকে শারীরিক নির্যাতন করে। শিশুটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে ও মাহফুজকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। গত ২১ মে সন্ধ্যায় চাঁদা না দেয়ায় বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এরশাদনগরের ৬ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী শারীরিক প্রতিবন্ধী মোশারফ হোসেনকে (৩৮) হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরদিন ২২ মে আউচপাড়া এলাকার নির্মাণাধীন হলি হোমস নামের একটি
ভবনের ভেতর টিটু (২০) নামে একজনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ওই এলাকায় ভাড়া থেকে ভবনে লিফট স্থাপনের কাজ করতেন তিনি। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানায়, সর্বশেষ হলি হোমস প্লাজায় লিফট স্থাপনের কাজ করছিলেন টিটু। স্বজনদের ধারণা, পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধে ঠিকাদার লোকজন নিয়ে টিটুকে রড ও কাঠ দিয়ে পিটিয়ে হত্যার পর লিফটের গর্তে ফেলে রাখে। ২৪ মে রাতে টঙ্গীর মাছিমপুরে সালাউদ্দিন (২৪) নামের এক যুবক খুন হন। মাদারীপুরের রাজৈর এলাকার হারুন অর রশিদেও ছেলে সালাউদ্দিন টঙ্গী আরিচপুর এলাকায় ভাড়া থেকে স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। গত ২৯ মে টঙ্গীর তুরাগ নদের পাড়ে হাজির বস্তি এলাকা থেকে বরগুনা সদরের সোনাতলা গ্রামের আবু হানিফের ছেলে বালু শ্রমিক মোঃ শাহাবুদ্দিনের (২৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩১ মে রাতে আউচপাড়ার খাঁপাড়া সড়কে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তমাল (১৩) নামের এক দোকান কর্মচারী কিশোরকে। পূর্বশত্রুতার জেরে একই এলাকার কয়েকজন বখাটে যুবক তাকে হত্যা করে একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিচে ফেলে রাখে। তমাল শেরপুর সদরের তিরছা গ্রামের মৃত সোহরাব আলীর ছেলে। সে আউচপাড়ার খাপাড়া রোডের মোল্লাবাড়ী এলাকার আমির কনষ্ট্রাকশন নামের একটি টাইলসের দোকানের কর্মচারী ছিল। ২০ এপ্রিল টঙ্গীর খা-পাড়ায় সহপাঠী বখাটেদের ছুরিকাঘাতে ফেরদৌস আহমেদ (১৪) নামে নবম শ্রেনীর অপর এক স্কুলছাত্র খুন হয়েছে।
এছাড়াও ঢাকা- ময়মনসিংহ সড়কের টঙ্গী কলেজ গেইট থেকে হোসেন মার্কেট পর্যন্ত এলাকা, খাপাড়া রোড়, নৈমদ্দিন মোল্লা রোড, মোল্লা বাড়ী রোড়, নিমতলী, রেলগেট, নতুনবাজার, তিস্তার গেট, কামারপাড়া সড়ক, খরতৈল, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমী সড়ক, মধুমিতা সড়ক ও এরশাদনগরে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই থানায় অভিযোগ করে না। গত ১৩ মে সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজ মোড়ে সিসিএল কারখানার এক শ্রমিককে কুপিয়ে জখম করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। ১৮ মে সন্ধ্যায় কামারপাড়া সড়কে তিন ব্যবসায়ী নাছির, রানা ও সুমনকে কুপিয়ে ছিনতাইকারীরা ৯০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এভাবে একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেলেও পুলিশের টহল অপ্রতুল। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, ঈদ
এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ছিনতাইয়ের প্রকোপ আরো বাড়তে পারে। অপরদিকে এ এলাকায় সবচেয়ে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা। অধিকাংশ মাদকাসক্তই এখন ইয়াবায় আসক্ত। এ মাদক পরিবারের শান্তি কেড়ে নিয়েছে। মাদকাসক্ত সন্তানের কারণে ভেঙে যাচ্ছে একটি পরিবারের রঙিন স্বপ্ন। নেশার টাকা সংগ্রহে মাদকাসক্তরা জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাইসহ নানা ভয়ঙ্কর অপরাধে। তাদের কারণে বাড়ছে পারিবারিক অস্থিরতা ও সামাজিক অপরাধ, খুনাখুনি। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাবা অটো রিক্সা বা ঠেলা- ভ্যান চালক। কিন্তু তার ঘরের বখাটে ছেলেটি চালায় বিভিন্ন ব্রান্ডের মোটর বাইক। সারাদিন এসব বখাটেদের তেমন আনাগোনা না দেখা মিললেও বিকেল থেকে শুরু হয় তাদের তান্ডব। তবে অনেকের ঘরেই নেই সঠিক খাবারের ব্যবস্থা। আর বাবা হিমশিম খায় পরিবারের দৈনন্দিন খাবার আর বাসস্থানের খরচ যোগাতে। এমনই অবস্থার মধ্যে বসবাস করা স্থানীয়রা রয়েছে চরম আতংকে।
এব্যপারে টঙ্গী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফিরোজ তালুকদার বলেন, দশ লক্ষাধিক জনগনের বসবাস এ এলাকায়। এ ধরনের দু’ একটি ঘটনা স্বাভাবিক। আর মাদকের বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যহত আছে। তাছাড়া এরিয়া ও জনগন অনুপাতে আমাদের ফোর্সের সংখ্যাও কম।