বিএনপি-আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচার
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে টাকা রাখার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকে প্রায় ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা জমা রাখা হয়েছে। অথচ বিশ্বের অন্য দেশগুলো থেকে সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার পরিমাণ কমেছে। এদিকে, বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকে এতো টাকা রাখার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠায় পরস্পরের প্রতি পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সুইস ব্যাংকে দলটির কারো টাকা নেই, ওই টাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের। এদিকে, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দুর্নীতি আর লুটপাটের টাকা সুইস ব্যাংকে পাচার করেছে ক্ষমতাসীনরা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে কথা বলেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে পাচারের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে একদিন বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’
তার আগে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, 'ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত নাজুক, লালবাতি জ্বলার উপক্রম হয়েছে। আর সেই টাকা লুট করেই সুইস ব্যাংকে পাচার করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করে সবাই।'
এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির বিরুদ্ধে। শুক্রবারের এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘অর্থ পাচারের রেকর্ড আওয়ামী লীগের নেই। বিএনপি বারবারই অর্থ পাচার করে আসছে। এটা আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত। তারেক-কোকের মানি লন্ডারিংয়ের কথা সবাই জানে।’
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী যোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগের কেউ সুইস ব্যাংকে টাকা রেখেছে বলে আমরা খবর পাইনি। যদি কারো রাখার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
২০১২ সাল থেকে সুইস বাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ জমা দেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছিল। সে হিসেবে গতবার জমা রাখার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা! অর্থাৎ প্রায় ২০ শতাংশ।
সুইস ব্যাংকে এভাবে টাকা জমা রাখার বিষয়টি উদ্বেগজনক বলেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়াতেই এমন অবস্থার তৈরি হয়েছে।’
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সরকার চাইলেই অর্থ পাচার ও পাচারকারীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু সেই কাজটি করছে না সরকার।’
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান আবার বলছেন, সুইস ব্যাংকে জমা হওয়া এতো অর্থ বাংলাদেশ থেকে নাও যেতে পারে। তার ব্যাখ্যা, ‘সুইস ব্যাংকগুলোতে অর্থ জমার যে পরিমাণ বলা হচ্ছে, তা পুরোটাই বাংলাদেশ থেকে গেছে বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়।’
‘দেশের বাইরে বৈধভাবে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীদের পাশাপাশি সুইজারল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও সেখানে অর্থ জমা করছে। তাই বাংলাদেশ থেকে কত অর্থ গেছে, সেই তথ্য পাওয়া গেলে তবেই অর্থ পাচার সম্পর্কে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। অর্থ পাচার রোধে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।