জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
এবারের বাজেট অধিবেশন সাংসদদের তর্কে-বিতর্কে যতোটা প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল সমসাময়িককালে ঠিক তেমনটি আর চোখে পড়েনি। জাতীয় সংসদ প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল বিধায় গণমাধ্যমগুলোতেও বাজেট অধিবেশনের খবরাখবর বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়। প্রতিদিনই জাতীয় সংসদের অধিবেশন ছিল আলোচনা আর সমালোচনায় মুখরিত। বাজেটের উপর আলোচনায় শুধু সরকারি দল নয়, বিরোধী দলের সংসদ সদস্যগণকেও প্রাণখুলে কথা বলতে দেখা যায়। অধিবেশনের প্রতিটি দিনে সাংসদদের উপস্থিতিও ছিল অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।
বাজেট অধিবেশন শুরু হয় গত ৩০ মে মঙ্গলবার সকাল ১১ টায়। এটি ছিল দশম জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশন। এরপর ১ জুন বেলা দেড়টায় জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এটি ছিল দেশের ৪৬ তম, আওয়ামী লীগের ১৭ তম এবং অর্থমন্ত্রীর ১১তম বাজেট প্রস্তাব। ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের’ শ্লোগানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয় ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের মূল বাজেট ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা থেকে ২৬ শতাংশ বেশি ছিল। বাজেটে ব্যয় মেটাতে সরকারি অনুদানসহ আয়ের পরিমাণ ধরা হয় ২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ধরা হয় ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। মোট ঘাটতি ১ লাখ ৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ধরা হয় (এডিপি) ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। সংসদে ৩০ জুন বৃহস্পতিবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাাবিত বাজেট পাস হয়। সেই মাফিক ১ জুলাই শনিবার থেকে এ বাজেট-এর কার্যকর শুরু হয়েছে। বাজেট অধিবেশন শুরুর পর প্রায় এক মাস আলোচনা শেষে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার সর্বকালের বড় বাজেটটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বাজেট অধিবেশনে যে বিষয়গুলো নিয়ে তুমুল আলোচনা হয় সেগুলো হলো- আবগারি শুল্ক, সঞ্চয়পত্রের উপর প্রদত্ত সুদের হার, চালের উচ্চমূল্য ও খাদ্যঘাটতি, ব্যাংকিং খাতের লুটপাট, হাওর ও পাহাড়ের মানুষের কান্না, ভ্যাট আইন ইত্যাদি। সাধারণ আলোচনায় সরকারি দলের সংসদ সদস্যগণ যেমন জন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়ে খোদ অর্থমন্ত্রীর প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন তেমনি বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাও সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে ভীষণরকম কোণঠাসাও হতে দেখা যায়। কেউ কেউ তার পদত্যাগও দাবি করেন। তবে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদৃষ্টি সিদ্ধান্তের কারণে অনেকটা স্বস্তির সাথেই বাজেট পাশ হয়। শেখ হাসিনা আবারও প্রমাণ করতে সক্ষম হন তিনি জনগণের মনের কথাটি ভালোভাবেই বুঝেন।