শ্রীপুরে শিক্ষানবিশ এসআইয়ের বেপরোয়া চাঁদাবাজি!
টি.আই সানি, গাজীপুর Channel 4TV :
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা সাদা পোশাকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পুলিশের এক শিক্ষানবিশ উপ-পরিদর্শক (পিএসআই)। তার নাম আবুবকর সিদ্দিক। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামানের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আটক করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এই এসআইয়ের বিরুদ্ধে। শ্রীপুর উপজেলাজুড়ে পুলিশ আতঙ্ক বিরাজ করলেও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় দুই মাস আগে পিএসআই হিসেবে আবু বকর সিদ্দিক শ্রীপুর থানায় যোগদান করেন। তখন থেকেই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। এসব মাদক ব্যবসায়ীকে নিজের সোর্স বানিয়ে সাধারণ মানুষকে আটক করে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিচ্ছেন সিদ্দিক।
স্থানীয়দের আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেননি পিএসআই আবু বকর সিদ্দিক। বরং তিনি বলেন, ‘ওসি স্যারের নির্দেশে আমি তাদের আটক করে নিয়ে আসি। পরে বিভিন্ন লোকজনের তদবিরের কারণে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ২১ জুন উপজেলার জৈনা বাজারের রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী ও শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মশিউর রহমান নয়েছকে না পেয়ে তার দোকানের ম্যানেজার সাহাব উদ্দিনকে আটক করে থানা নেওয়া হয়। পরে এক লাখ টাকার বিনিময়ে ছাড়া পান তিনি।
এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, ২২ জুন সন্ধ্যায় শ্রীপুর পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি শাহজাহান চঞ্চলকে আটক করেন সিদ্দিক। এক লাখ টাকার বিনিময়ে তাকেও ছেড়ে দেওয়া হয়।
একইভাবে ৫ জুন শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন মৃধাকে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়। পরে দেড় লাখ টাকা নিয়ে ছাড়া হয় তাকে।
৩ জুন তারাবির নামাজের পর শ্রীপুর উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদকে থানায় নিয়ে যান পিএসআই সিদ্দিক। অভিযোগ পাওয়া গেছে, দেড় লাখ টাকা নিয়ে ভোর ৪টায় তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এছাড়াও ৫ জুলাই বিকালে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের বাড়ির মোড় থেকে ২০ বোতল ফেনসিডিলসহ আব্দুল আজিজ নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন পিএসআই সিদ্দিক।
৬ জুলাই সন্ধ্যায় কড়ইতলা এলাকা থেকে শ্রীপুর উপজেলার জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সভাপতি মো. আব্দুল আলীমকে আটক করেন সিদ্দিক। রাত ৩টায় ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।
ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে তেলিহাটি ইউনিয়নের গোদারচালা গ্রামের শামসুদ্দিনের ছেলে যুবলীগ কর্মী হাফিজুল ইসলাম ও টেংরা গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে সফিকুল ইসলামকে আটক করা হয়। পরে হাফিজুল ইসলামকে ২০ হাজার টাকা ও সফিকুল ইসলামকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়া হয়।
দলীয় নেতা-কর্মীদের আটকে রেখে পুলিশের এই চাঁদাবাজির ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন। তিনি বলেন, ‘মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করে চাঁদা আদায় করছে পুলিশ। নিয়মিত এ ধরনের অভিযোগ আসছে আমাদের কাছে। সরকার যেহেতু অবৈধ তাই পুলিশ প্রশাসনের ওপর তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নাই।’
একই বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল বলেন, ‘টার্গেট করে বিএনপি নেতাদের হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে মানুষ এটা আশা করে না।’
এদিকে, পিএসআই আবু বকর সিদ্দিকের এসব চাঁদাবাজির ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন শ্রীপুর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘অযথা মানুষকে আটক করে হয়রানি করা ও চাঁদা আদায় করতে বলিনি আমি। সিদ্দিক যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তবে এটা একান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এরসঙ্গে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নাই।’
ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) গোলাম সবুর জানান, ভুক্তভোগীরা যদি লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে বিষয়গুলো তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।