তিস্তার পানি বিপদসীমার উপরে, পানিবন্দি লাখো মানুষ
টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটের দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি আবারো বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এতে জেলার হাতীবান্ধাসহ কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার নদীর তীরবর্তী ২৫টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে।
পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় আট হাজার পরিবার।
পাউবো সূত্র জানিয়েছে, রোববার রাতে দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদ সীমার ০৩ সে. মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাতে তিস্তা ব্যারাজের উজানে থাকা গজল ডোবা বাধের ১১টি গেট খুলে দেয়ায় পানির পরিমাণ আবারো বৃদ্ধি পায়।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যারাজের সবকটি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
এদিকে, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলা উদ্দিন খাঁন জানান, নদী তীরবর্তী মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের প্রস্তুতি চলছে।
জামালপুর:
জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ওইসব এলাকার ২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
করা হয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সোমবার সকালে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। যমুনা ছাড়াও ব্রক্ষ্মপুত্র, ঝিনাইসহ শাখা নদীগুলোর পানিও বাড়তে শুরু করেছে।
বন্যায় জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি, পার্থশী, চিনাডুলী, বেলগাছা, সাপধরী, নোয়ারপাড়া, গাইবান্ধা, গোয়ালেরচর, চরপুঠিমারী, পলবান্ধা, চরগোয়ালীনি, দেওয়াগঞ্জের সদর, চিকাজানি, চুকাইবাড়ি, মেলান্দহের ঝাউগড়া, মাহমুদপুর, কুলিয়া, ঘোষেরপাড়া, মাদারগঞ্জের সদর এবং সরিষাবাড়ীর উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
পানির তোড়ে ইসলামপুর উপজেলার আমতলী-বলিয়াদহ-শিংভাঙ্গা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
অপরদিকে পানি উঠে পড়ায় জেলার ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি হাই স্কুল এবং একটি দাখিল মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কাজ ও খাবারের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পানিবন্দিরা।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইসলামপুরে ১০ মেট্রিক টন ও দেওয়ানগঞ্জে ১০ মেট্রিক টন চাল ,৫০০প্যাকেজ শুকনা খাবার এবং নগদ ২০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
কুড়িগ্রাম:
ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।
চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের ২ শতাধিক গ্রাম।
পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। বন্যা কবলিত বেশির ভাগ মানুষ গত ৪দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পড়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোনো ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি।
নিম্নাঞ্চালের পথ-ঘাট ও ঘর বাড়ি তলিয়ে থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে তাদের। বন্ধ রয়েছে জেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নুন খাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৯ সেন্টিমিটার, সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট:
সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে। প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে- সুরমা ও কুশিয়ারার তিনটি পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে বন্যা কবলিত উঁচু এলাকার পানি নেমে গেলেও নিম্নাঞ্চলের পানি নামছে ধীরে ধীরে। ফলে পানি কমলেও দুর্ভোগ কমছে না দুর্গত মানুষদের।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম থেকে জানা যায়, কানাইঘাটে সুরমা বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার, বিয়ানীবাজারের শেওলায় কুশিয়ারা বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার, জকিগঞ্জের অমলসিদে কুশিয়ারা বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার রাতে এই তিনটি পয়েন্টে পানি বেড়েছে।
বন্যার শুরুর দিকেই পানিতে তলিয়ে যায় জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-রাস্তাঘাট। এরইমধ্যে বাজারের বেশির ভাগ এলাকার পানি নেমে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত কয়েক দিন ধরে জেলার ৮টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে।
উপজেলা ৮টি হচ্ছে-জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, কানাইঘাটের একাংশ, বিশ্বনাথ ও কোম্পানীগঞ্জ। বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জে ১১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৬৩৯ জন বন্যার্ত লোক আশ্রয় নিয়েছেন।