গৃহকর্মী নির্যাতকদের জন্য চূড়ান্ত সতর্কবাণী
আমাদের সমাজে যখন প্রতিনিয়ত শিশুশ্রম আর গৃহকর্মী নির্যাতন বেড়ে চলেছে তখন গৃহকর্মী আদুরি নির্যাতনের মামলায় যুগান্তকারি এক রায় দিয়েছেন আদালত। এই মামলার প্রধান আসামী নওরিন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। একইসঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। ঢাকার নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-তিনের বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার এ রায় দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আসামি পক্ষ আপিল করার কথা বললেও নওরীনকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবে আপিল করার অধিকার আসামিপক্ষের আইনি অধিকার, তাই তারা সেটা করতেই পারেন। কিন্তু তারপরও এই রায়কে গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধে মাইলফলক বলেই আমরা মনে করি। শুরু থেকে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীর পাশে থেকে তাকে ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ তৈরি করে দেয়ায় জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতিকেও আমরা অভিনন্দন জানাই। আমাদের সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায়, গৃহকর্মী নির্যাতন এখন যেন অনেক সবলের কাছে অনেকটা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যেমন আদুরি নির্যাতন। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে শিশু গৃহকর্মী আদুরিকে রাজধানীর পল্লবী ডিওএইচএস এলাকার একটি ডাস্টবিনে আধমরা অবস্থায় পাওয়া যায়। কয়েকদিন আগে এক সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও শিশু গৃহকর্মী সাবিনাকে অমানুষিক নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। এর আগে প্রখ্যাত একজন কণ্ঠশিল্পী এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধেও গৃহকর্মীকে নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগ উঠে। এছাড়া জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারও একই অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে ছিলেন। শুধু দেশেই নয়, বরং দেশের সীমানা পেরিয়ে সুদুর যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশি দু’জন কুটনীতিকের বিরুদ্ধে একইভাবে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ উঠায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই উদাহরণগুলো ছাড়াও নিভৃতে অনেক গৃহকর্মী নির্যাতিত হচ্ছে। তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেগুলোর অধিকাংশই আমাদের অগোচরে থেকে যায়। আজকের এই রায়ের ফলে এখন থেকে গৃহকর্মী নির্যাতনের আগে নির্যাতককে নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে। তবে আইনের কঠোরতার পাশাপাশি এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা এবং গৃহকর্মীদের অধিকার সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে সরকারিভাবে জোরালো প্রচারণা চালানো জরুরি বলে আমরা মনে করি। পাশাপাশি মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও এই বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা সকলের অংশগ্রহণে আমাদের এই দেশ ক্রমেই মানবিক হয়ে উঠবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।