তেঁতুলিয়ায় এক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কুচক্রীমহল হতে বাঁচাতে বিক্ষোভ সমাবেশ
পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তেঁতুলিয়া মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়কে কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের হাত হতে বাঁচাতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২৩ জুলাই) সকাল ১১টায় তেঁতুলিয়া মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ হতে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে উপজেলার প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে চৌরাস্তা মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অংশ নেন শিক্ষক, শিক্ষার্র্থী, অবিভাবকসহ সচেতন মহল। এসময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরাও উপস্তিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আরাফাত হোসাইন, অভিভাবক হাফিজুুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল হাকিম ও মনসুর আলম। বক্তারা বলেন, বিদ্যালয়টিকে এক কুচক্রী মহল দ্বারা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছেন। দীর্র্ঘ এক যুগ ধরে ম্যানেজিং কমিটি বিহীন অবস্থায় পরিচালিত হয়ে আসছে। বার বার ম্যানেজিং কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলেও তা ভেস্তে যায় এক স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কারণে।
তাছাড়া বিগত ৮ বছর ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতা থাকলেও ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় নতুন শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব হয়নি। যার ফলে পাঠদান কার্র্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শুধুুমাত্র প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের কর্র্মরত শিক্ষকবৃৃন্দকে নিয়ন্ত্র্রণ করতে পারছেন না। এতে করে নিয়মিত কমিটি না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি আর্র্থিক বিষয়টিও লেজে গোবরে পরিণত হওয়ায় প্রতিষ্ঠান প্রধানকে কোন জবাবদিহিতাও করতে হয়না। এদিকে এনটিআরসি কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটিতে ৫জন শিক্ষক নিয়োগ হলেও কমিটি না থাকায় এসব শিক্ষকদের এমপিওভুুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
গত ২০ জুুলাই ছিল ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্র্বাচনের দিন। দীর্র্ঘদিন ধরে ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় তা গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০ জুলাই তারিখ নির্র্ধারন করে ঘোষনা করা হয় নির্বাচনী তফশীল। কিন্তু তফশীল ঘোষনার পরই শুরু হয় রাজনীতি। নির্বাচন বানচাল করার নকশা। এই নির্বাচনে মনোনয়ন নেন আব্দুর রহমান নামের এক দাতা সদস্য। অত্যন্ত সহজ সরল এই দাতা সদস্যকে কুচক্রী মহল রাজনৈতিক মন্ত্র পড়িয়ে বাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত নির্বাচন সাময়িকভাবে স্থগিত করে।
কিন্তু এই স্থগিত আদেশ জানানো হয় রাত ১২টার দিকে। হঠাৎ করেই নির্বাচন স্থগিতের আদেশ এমন প্রচার মাইকিংয়ের মাধ্যমে করা হলে কিছু ভোটারের প্রতিবাদে মাইকিং বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০ জুলাই সকালে বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে ভোট দিতে আসেন ভোটাররা। কিন্তু কেন্দ্রে এসে শুনেন আদালতে নিষেধাজ্ঞায় নির্বাচন স্থগিত। ভোট দিতে এসেও ভোট না দিতে পেরে ফিরে যান প্রায় দুই শতাধিক ভোটার। নির্বাচনে ৫০৪টি ভোটারের ১২ জন প্রার্থী, তার মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৬ জন।
এদিকে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভোকেশনাল বিভাগের ইরশাদুল আলমের বিরুদ্ধে রয়েছে নানান প্রতারণা অভিযোগ। চাকুরী ক্ষেত্রে বয়স কমানো, পরীক্ষায় অকৃৃতকার্য ছাত্রকে পাশ করিয়ে দেওয়ার নামে তার বির্ুেদ্ধ এরকম অভিযোগ উঠে এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। এ কারণে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিদ্যালয়টির নানান সমস্যা ও ম্যানেজিং কমিটির দাবি এবং কুচক্রী মহলের হাত হতে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে আয়োজন করা হয় এই বিক্ষোভ সমাবেশ।
সমাবেশে বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে কুচক্রী মহলের একজনের নাম। এর স্পষ্ট উচ্চারণ করেন বক্তা মুনসুর আলম। তিনি তার বক্তব্যে মোখলেসুর রহমানের নামে এক রাজনৈতিককে উল্লেখ করে বলেন, স্কুলটিকে তিনি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদটির লোভ সামলাতে না পেরে নিজ ছেলেকে দিনাজপুরের একটি উন্নত স্কুল থেকে প্রথম আজিজনগর ও পরে তেঁতুলিয়া পাইলটে ভর্র্তি করান। যে নিজ সন্তানকে রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে, তার কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা যেতে পারে না। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। অবিভাবকরা দলমত নির্বিশেষে বিদ্যালয়টির সমস্যা সমাধানে সর্বমহলের সহযোগিতা কামনা করেন।