দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে চান সিদ্দিকুর
চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার ভারতের চেন্নাইয়ে নেয়া হচ্ছে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানকে।
সিদ্দিকুরের বন্ধু ও সহপাঠী শেখ ফরিদ তার বড় ভাই নায়েব আলী এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একজন সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম সঙ্গে রয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছি, আমি যেন চোখে দৃষ্টি ফিরে পাই। আমার প্রথম আর্জি, যেন দেশে এসে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পারি।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে সিদ্দিকুরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।
এ সময় সিদ্দিকুরের বড় ভাই সবাই কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মো. সিদ্দিকুর রহমানের দুই চোখ পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর সোমবার ক্ষীণ আলো দেখতে পেয়েছেন তিনি।
সোমবার দুপুরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার মো. মুনির বলেন, ডান চোখে কোনো আলো দেখছেন না সিদ্দিকুর।
গত শনিবার সকালে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে তার দুই চোখে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকেরা বলেন, তার চোখের আলো ফিরে পাওয়ার আশা ক্ষীণ।
হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার মনির বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার শুরু হয়ে দেড় ঘণ্টা ধরে দুই চোখ অস্ত্রোপচার হয়েছে। সিদ্দিকুর রহমানের ডান চোখের ভেতরের অংশ বের হয়ে এসেছিল তা যথাস্থানে বসানো হয়েছে। বাঁ চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; রক্ত ছিল, তা পরিষ্কার করা হয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক ড. গোলাম মোস্তফা বলেন, তার দুই চোখের অপারেশন করা হয়েছে, দুটো চোখেই মারাত্বক ক্ষতি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। পুলিশের ‘কাঁদানে গ্যাসের শেলের’ আঘাত লাগে তার দুই চোখে। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের একজন সদস্য দৌঁড়ে গিয়ে খুব কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছেন। তার পরপরই মাটিতে পড়ে যান সিদ্দিকুর। রাস্তার ওই স্থানটি রক্তে লাল হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা বলেন, সিদ্দিকুরের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে পড়াশোনা করে সিদ্দিকুর তিতুমীর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। খিলক্ষেতের একটি মেসে থাকেন।
সিদ্দিকুরের গ্রামে বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দার ঢাকেরকান্দায়। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বয়স যখন মাত্র তিন বছর, তখন বাবা মারা যান। মা সুলেমা খাতুন কিষানির কাজ করে লেখাপড়া করান সিদ্দিকুর ও আর তার বড় ভাইকে। মাধ্যমিক পাস করার পর পড়ালেখা ছেড়ে দেন বড় ভাই নায়েব আলী হাল ধরেন সংসারের। রডমিস্ত্রির কাজ করে সিদ্দিকুরের পড়ালেখার খরচ জোগার করেন তিনি।