টানা বর্ষনে সাভারের শিল্পাঞ্চল-আশুলিয়ায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ।
আব্দুস সাত্তার, সাভার ও আশুলিয়াঃ
টানা বর্ষনে সাভারের শিল্পাঞ্চল-আশুলিয়ায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে । শ্রমিক পল্লীসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সড়ক গুলোতে হাঁটু পানি জমে যাওয়ায় বর্তমানে চলাচলে ব্যহত হচ্ছে। শুধু সড়কেই নয়। ঘর-বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। গত দুই সপ্তাহের বেশী সময় ধরে মানবেতর দিন পাড় করছে এলাকাবাসী। আর জলাবদ্ধতা ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে শিশু ও বৃদ্ধদের দেখা দিয়েছে নানা পানিবাহিত রোগ। জলাবদ্ধতার এমন চিত্র এ অঞ্চলের জামগড়া চৌরাস্তা, গাজীরচট, বাইপাইল, শ্রীপুর, চিত্রশাইল, ভাদাইল, পবনারটেক, কুঁরগাও ও জিরানীসহ আরো অনেক এলাকার এমন চিত্র লক্ষণীয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, টানা বৃষ্টিতে শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথায় কোমড় পানিতে ডুবে আছে। বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৬ লক্ষাধিক মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাদের দৈনন্দিন কর্মজীবন থমকে গেছে। পানি নিষ্কাশণের জন্য পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় খাবার পানি, রান্নাসহ গৃহস্থলি কাজ নিয়ে তারা চরম হতাশা, উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছেন।
জামগড়া দাদা মার্কেট এলাকার রিক্সা গ্যারেজ মালিক মো আনিছ জানান, অল্প বৃষ্টিতেই তাদের এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর জন্য বর্ষাকাল দরকার হয় না। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তার পুরো রিক্সা গ্যারেজ কোমড় পানিতে তলিয়ে গেছে। ৭০-৮০ টি রিকশা পানির নিচে ডুবে থাকায় উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এমন দশা আর কিছু দিন থাকলে পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে রিকক্সা চালক মহিউদ্দিন বলেন, রিক্সা চালানোতো দূরের কথা ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। সারা দিন রাত বাটি দিয়ে সপরিবারে সেই পানি সেচতে হয়। আর বাইরে বের হয়েও লাভ নাই। কারণ দাদা মার্কেট থেকে তিনি রিক্সা ভাড়া নিয়ে চালান সেটিও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাই কাজ করতে না পেরে গত কয়েক দিন ধরেই অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
এদিকে অন্য ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জলাবদ্ধতার কারণে তাদের জীবন-যাপন করা বর্তমানে কঠিন হয়ে পড়েছে। পোকামাকড় ও সাপের ভয়ে ছেলে মেয়েদের নিয়ে দিনে যেমন রাতে আতঙ্কে সময় পাড় করতে হয়।
পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির অভাব, গ্যাস সংকট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও টয়লেট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় তাদের ভোগান্তি এখন চরমে পৌছেছে। এছাড়া কর্মস্থলে যেতেও তাদের পড়তে হচ্ছে নানা বিরম্বনায়। একে সারা দিন মুষুল ধারে বৃষ্টি পড়ছে। আর সড়কে হাটু পানি জমে থাকায় খানা খন্দ দেখতে না পেয়ে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যা নিরসণে জন-প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন তারা।
জামগড়া এলাকার আব্দুস সামাদ ও গাজীরচটের ফাতেমা আক্তার বলেন, বৃষ্টির পানি ঘরে উঠে যাওয়ায় ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছেন। পানি নিষ্কাশণের জন্য মোটর বসিয়ে দিন রাত সেচেও কোন লাভ হচ্ছে না। কারণ পানি বের হওয়ার কোন পথ নেই। ড্রেন না থাকার কারণে পানি রাস্তা থেকে বাড়িতে প্রবেশ করছে। এছাড়া পয়ঃনিষ্কাশণের ব্যবস্থা না থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই তাদের বসবাস করতে হচ্ছে।
তারা আরো বলেন, প্রতি বছর বর্ষাকালে এমন দুর্দশা হলেও এসব দেখার কেউ নেই। নির্বাচিত কোন জনপ্রতিনিধিই এযাবৎ কালে তাদের এই সমস্যা নিরসণে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
তবে স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মঈনুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, দেশের অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদের তুলনায় ধামসোনা ইউনিয়নে জনসংখ্যা কয়েক গুণ বেশী। আর দেশের প্রথম রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলও এখানেই অবস্থিত। এছাড়াও এখানে কয়েক শত শিল্পকারখানা ও অসংখ্য আবাসন গড়ে উঠেছে। কিন্তু এই ইউনিয়নের বাজেট ঠিক অন্য ইউনিয়নের মতই রয়ে গেছে। এত লোকের বসবাসের জন্য যে ধরণের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পরিকল্পিত নগরায়ন হওয়ার দরকার ছিলো তা হয়নি। ফলে অপরিকল্পিত ভাবে খাল-বিল ভরাট করে আবাসন ও কারখানা গড়ে তোলার কারণে পানি নিষ্কাষণের পথ সরু হয়ে গেছে। তাই সরকারের মহাপরিকল্পনা ব্যতিত শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিশোধের বাজেটের আওতায় এই সমস্যার দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান সম্ভব নয় বলেও জানান এই জন প্রতিনিধি।
এদিকে শিল্পঞ্চল-আশুলিয়ায় জলাবদ্ধতা নিরসণের ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহর ও নগর পরিকল্পণা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মঈনুদ্দিন বলেন, শিল্পাঞ্চলের কারণে আধুনিক সভ্যতা গড়ে উঠলেও সাভার ও আশুলিয়া প্রশাসনিক ভাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনেই রয়েছে। তাই এখানকার উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে বাজেটের একটা জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু যেভাবে শিল্পকারখানা ও আবাসন গড়ে উঠেছে এতে করে এটাকে গ্রাম ভাবার কোন সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, এই অঞ্চলের সড়ক-মহাসড়ক ও শাখা সড়কগুলোতে পরিকল্পিত ড্রেনেজ নির্মাণসহ খাল-নদী গুলোতে অবাধ পানি প্রবাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল জলাবদ্ধতা সংকট নিরসণ সম্ভব হবে।