তেঁতুলিয়ায় ৭শ ৭৭ জন নারী পাচ্ছেন মাতৃত্বকালীন ভাতা
এস কে দোয়েল, পঞ্চগড় : তেঁতুলিয়ায় ৭শ ৭৭ জন হতদরিদ্র নারী পাচ্ছেন মাতৃত্বকালীন ভাতা। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু রোধে মাতৃত্বকালীন এই ভাতায় রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৭শ ৭৭জন মাকে প্রত্যেককে মাসিক ভাতা হিসেবে দেয়া হচ্ছে ৫০০টাকা। প্রতি ৬ মাস পর পর উপকারভোগীর নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাব নাম্বারে ৩ হাজার টাকা জমা হয়। আর বছরে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান হয় ২৩ লক্ষ ৩১ হাজার টাকার।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা করুণা কান্ত রায় প্রতিনিধিকে জানান, মাতৃমৃত্যু এবং শিশু মৃত্যু রোধ করার লক্ষ্যে গর্ভকালীন সময়ে কিংবা গর্র্ভের পরে মা ও শিশু পুষ্টির চাহিদা মিটানোর জন্যই এই ভাতা চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সমন্ধে বিভিন্ন পরামর্শমূলক সেবা দেওয়া হয়। সাধারণত প্রথম অথবা দ্বিতীয় গর্ভকালীন সময়ে ২ বছর মাসিক এই ভাতার টাকা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র মায়েরা আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, সমাজের অসহায়, অসচ্ছল ও সুবিধাবঞ্চিত মায়েদের মাতৃত্বকালীন সময়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০০৮ সাল থেকে সরকার এভাতা চালু করেছে। চলতি বছর প্রত্যেক ইউনিয়নে ১১১জন ভাতাভোগী এই সুবিধা পাচ্ছে। প্রতিবছরই এর ভাতাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি ২ বছর অন্তর অন্তর নতুন নামের তালিকা তৈরি করা হয়। এতে করে কমে আসছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার।
কিভাবে তালিকা প্রস্তুত করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গরিব পরিবারের মায়েদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা প্রশাসন তা চূড়ান্ত করে। এদিকে জেলার গ্রামীণ দরিদ্র সমাজে এখানো অনেকে প্রাচীন ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে অজ্ঞতা ও কুসংস্কার লক্ষ্য করা যায়।
একজন মা যখন গর্ভবতী হয়, তখন তার জন্য বাড়তি অথবা পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন হয়। যা গ্রামীন জনগোষ্ঠীর অনেকেই জানেনা বা খেয়াল করেননা কিংবা অর্থনৈতিক দৈন্যতার জন্য সম্ভব হয়না। কারো কারো ধারণা মাতৃত্বকালীন সময়ে কম খাবার খেতে হয়। শাক-সবজি খেলে পেটে অসুখ হয়। তাই মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের মাধ্যমে মা ও তার পরিবারের লোকজন চাহিদামত খাবার খেতে পারে। অজ্ঞতা দূর হচ্ছে। পুষ্টির অভাব অনেকটাই পূরণ হয়। ভাতা প্রাপ্তির ফলে ঐ পরিবারে মায়ের কদর বারে ও পরিবারের লোকজন মায়ের দিকে বাড়তি খেয়াল নেয়।
সোমবার (৩১ জুলাই) দুপুরে তেঁতুলিয়া সোনালী ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায় মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা উত্তোলন করতে। টাকা বিতরণ করছিলেন অফিসার (ক্যাশ) নিজাম উদ্দিন। এসময় কথা হয় লাভলীসহ কয়েকজন মা ও স্বামীর সাথে। এদের একজন বলেন, আমরা গরিব মানুষ। বাড়তি টাকা দিয়ে স্ত্রীর জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো সম্ভব নয়। এখন সরকারি টাকায় স্ত্রীকে বিভিন্ন খাবার কিনে দিচ্ছেন। শুধু শুধু লাভলী কেন, তার মতো অনেকেই এই ভাতার টাকায় গর্ভকালীন সময়ে ভালো আছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তারা।
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া বলেন, বর্তমান সরকার মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই মাতৃত্বকালীন ভাতা দরিদ্র ও অসহায় মায়েদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা নিশ্চিত করছে। মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে পুরস্কার লাভ করেছেন।