বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ আজো স্বাধীন হতোনা সাবিরুল ইসলাম
জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া,সুনামগঞ্জ
বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো ক্ষণজন্মা মানুষের জন্ম না হলে আজো এই দেশ স্বাধীন হতোনা। আজ তারই সুযোগ্য উত্তরসূরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধারা সম্মান পাচ্ছেন এবং তাদের বেতন ভাতাও সম্মানজনকভাবে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যুদ্ধকালীন সময়ে সুনামগঞ্জের ট্যাকেরঘাট,ডলুরা,মহেষখলা ও বাশঁতলায় যেসকল সাবসেক্টর রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন জেলায় একসাথে এতগুলো সাবসেক্টর নেই। তাই স্বাধীনতা যুদ্ধের এই স্মৃতিবিজড়িত সুনামগঞ্জ জেলার মানুষ সত্যি ধন্য। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলাম এসব কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন,তাদের শুধু মৎস্য,পাথর আর বোরো ধানের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে না। তিনি উন্নয়নশীল বিশ্বের ধনী দেশ হিসেবে সিঙ্গাপুরের সাথে সুনামগঞ্জকে তুলনা করে আরো বলেন অপার সম্ভাবনাময় এই জেলায় যদি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এলাকাগুলোতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয় তাহলে প্রতিনিয়ত দেশ বিদেশের পর্যটকদের একটি প্রাণকেন্দ্র হয়ে গড়ে উঠবে এই জেলা। তখন নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি দেশবিদেশের আগত পর্যটকরাও এখানকার বীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সর্ম্পকে ধারনা নেবে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে এই জেলার মানুষজন। তিনি বলেন এ জেলার প্রত্যেকটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্র ভবণ নির্মাণসহ যাদুঘর ও পাঠাগার স্থাপন করা হবে। এজন্য প্রশাসনের কর্মকর্তা,স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন মানুষজনের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন,মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে কার্যকর করা হবে। যেসব মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গা আছে অথচ বাড়ী নেই তাদেরকে সরকারী উদ্যোগে বাড়ী তৈরী করে দেবো। আগামী ২ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের দায়িত্ব নেবে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। সভায় কোরআন তেলাওয়াৎ করেন খালেকাবাদ জামে মসজিদের ইমাম হাফিজ আতাউর রহমান লস্কর। গীতা পাঠ করেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস সহকারী বিধান চন্দ্র তালুকদার।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ট্যাকেরঘাট সাব সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণমিলনী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। যুদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডার বীর-মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আলী আমজাদ (বড় ভাই) এর সভাপতিত্বে ও মোঃ আব্দুস শাহীদ তালুকদারের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পৌরসভার মেয়র আয়ূব বখত জগলুল,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবুল কালাম,সাবেক অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে,সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট স্বপন কুমার দেব,এডভোকেট রইছ উদ্দিন আহমদ,জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারন সম্পাদক এডভোকেট পীর মতিউর রহমন যুদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডার মোজাহিদ উদ্দিন আহমদ, কোম্পানী কমান্ডার এডভোকেট গোলাম মোস্তফা,কোম্পানী কমান্ডার এস.এন.এম মাহমুদুর রসুল (যোদ্ধাহত),তাহিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা রৌজ আলী,মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল হান্নান, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ। সভায় সুনামগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার মজুমদার,আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী জাহান,সাবেক এমপি আব্দুজ জহুরের পুত্র জুনেদ আহমদসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তৃতায় এডভোকেট আলী আমজাদ টেকেরঘাট সাবসেক্টরের অধীনস্থ ১০টি সম্মুখ যুদ্ধের বিবরণ দিয়ে বলেন এর মধ্যে মাত্র ৩টি যুদ্ধে শহীদ জগৎজ্যোতি আমার সাথে ছিল। সে আমাকে পা ধরে সালাম করতো। আমার অনেক জুনিয়র ছাত্র ছিল সে। আমি ছিলাম তার কোম্পানী কমান্ডার। কিন্তু সুনামগঞ্জে এ পর্যন্ত যত ইতিহাস লেখা হয়েছে সেখানে আমাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। বিকৃত মস্তিস্কের কোন কোন বুদ্ধিজীবি ও লেখকরা প্রকৃত ঘটনাকে উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নামে মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন বিকৃত ইতিহাস প্রণয়ন করেছেন। কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে দাস পার্টি,দাস বাহিনী নামে আলাদা বাহিনীর কল্পকাহিনী তৈরী করেছেন। প্রকৃতপক্ষে দাস পার্টি বা দাস বাহিনী নামে সুনামগঞ্জ জেলার কোথায়ও কোন বাহিনী ছিলনা।
পৌর মেয়র আয়্যুব বখত জগলুল বলেন,ইতিহাসে আমার বাবা হোসেন বখত ও আমার ভাইদের অবদানকেও খাটো করা হয়েছে। অথচ আমার পিতা নিজে তাহিরপুর থানার ওসিকে নিয়ে রণাঙ্গনে সম্মুখযুদ্ধে গৌরবোজ্জল ভুমিকা পালন করেছেন। সভায় পৌর মেয়র আলহাজ¦ আয়্যুব বখত জগলুলকে আহবায়ক ঘোষনা করে টেকেরঘাট সাবসেক্টর মুক্তিযোদ্ধা পূণর্মিলনী কমিটি গঠণ করা হয়।