বগুড়ার সেই তরুণী রাজশাহীর সেফহোমে পাঠানোর নির্দেশ
ভালো কলেজে ভর্তি করার প্রলোভন দেখিয়ে বগুড়ায় এক তরুণীকে ধর্ষণের পর ন্যাড়া করার ঘটনায় ১১ দিন চিকিৎসা শেষে সোমবার আদালত তাদের রাজশাহীর সেফহোম ও তার মাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে নিরাপদ স্থানে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১) এমদাদুল হকের আদালতে তাদের নেয়া হয়।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবদুল মোত্তালেব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মা-মেয়ে দুজনই এখন শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ এ কারণে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। ছাড়পত্র দেয়ার বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়েছে। এখন তারা হাসপাতাল থেকে কোথায় ফিরবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেবে পুলিশ।
সকালে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, ওই তরুণী এখন সুস্থ, আজ ছাড়পত্র দেয়া হবে। গত ২৮ জুলাই পুলিশি নিরাপত্তায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ও বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, সোমবার ওই তরুণী ও তার মাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের থাকা ও নিরাপত্তার ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, এর আগে ওই তরুণী এবং এ ঘটনায় করা দুটি মামলার বাদীর মাকে হাসপাতালে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য জেলার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম শ্যামসুন্দর রায়ের আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী হাসপাতালে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছিল।
মেয়েটি বলেন, পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান স্যার, আমাকে ভালো কলেজে ভর্তি হতে সহযোগিতা করবেন। আমি পড়ালেখা করতে চাই।
এ ঘটনায় মা ও মেয়েকে ন্যাড়া করে দেয় নির্যাতকরা। তারপর মেয়েটির মা থানায় মামলা করেন, যাতে জাতীয় শ্রমিক লীগ বগুড়া শহর শাখার আহ্বায়ক তুফান সরকারসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় অভিযোগ বলা হয়, এবার এসএসসি পাস করা মেয়েটিকে ভালো কলেজে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে গত ১৭ জুলাই ও পরে কয়েকবার ধর্ষণ করেন তুফান সরকার। আর এ কাজে তাকে সহায়তা করে তার কয়েকজন সহযোগী।
ঘটনা জানাজানির পর তুফানের স্ত্রী আশা ও তার বোন কাউন্সিলর রুমকিসহ ‘একদল সন্ত্রাসী’ মা-মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধরের পর নাপিত দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেয়।
মামলার পর ঘটনাটি গণমাধ্যমে এলে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এরপর তুফানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে জাতীয় শ্রমিক লীগ।
এ পর্যন্ত তুফানসহ মামলার এজাহারভুক্ত ১০ আসামির মধ্যে নয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরইমধ্যে তুফান ও রুমকি আটকের পর কয়েকদফা রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গতকাল তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ আদালত।
তুফানের সহযোগী আতিক (২৩) ও মুন্না এবং নরসুন্দর জীবন রবিদাস আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
গত ৪ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ বলেন, মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতিবেদন পেয়েছি, সেখানে ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন চিকিৎসকরা।