সিদ্দিকুরের ঘটনায় ৭ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সুপারিশ
রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশে ভূমিকা খতিয়ে দেখতে পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মো. সিদ্দিকুর রহমানের চোখে শেল ছোড়ায় সাত পুলিশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
সোমবার সকালে কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার অপারেশনস মীর রেজাউল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৭ জুলাই চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ে নেয়া হয় রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানকে।
সিদ্দিকুরের বন্ধু ও সহপাঠী শেখ ফরিদ তার বড় ভাই নায়েব আলী এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একজন সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম সঙ্গে যান।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে সিদ্দিকুরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মো. সিদ্দিকুর রহমানের দুই চোখ পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশেও অস্ত্রোপচারের পর ক্ষীণ আলো দেখতে পান তিনি।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার মো. মুনির বলেন, ডান চোখে কোনো আলো দেখছেন না সিদ্দিকুর।
হাসপাতালের পরিচালক ড. গোলাম মোস্তফা বলেন, তার দুই চোখের অপারেশন করা হয়েছে, দুটো চোখেই মারাত্বক ক্ষতি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২০) রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শাহবাগে অবস্থান নেন সিদ্দিকুর রহমান। পুলিশের ‘কাঁদানে গ্যাসের শেলের’ আঘাত লাগে তার দুই চোখে। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের একজন সদস্য দৌঁড়ে গিয়ে খুব কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছেন। তার পরপরই মাটিতে পড়ে যান সিদ্দিকুর। রাস্তার ওই স্থানটি রক্তে লাল হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা বলেন, সিদ্দিকুরের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে পড়াশোনা করে সিদ্দিকুর তিতুমীর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। খিলক্ষেতের একটি মেসে থাকেন।
সিদ্দিকুরের গ্রামে বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দার ঢাকেরকান্দায়। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বয়স যখন মাত্র তিন বছর, তখন বাবা মারা যান। মা সুলেমা খাতুন কিষানির কাজ করে লেখাপড়া করান সিদ্দিকুর ও আর তার বড় ভাইকে। মাধ্যমিক পাস করার পর পড়ালেখা ছেড়ে দেন বড় ভাই নায়েব আলী হাল ধরেন সংসারের। রডমিস্ত্রির কাজ করে সিদ্দিকুরের পড়ালেখার খরচ জোগার করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার ভারতের চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে অস্ত্রোপচার করা হয় সিদ্দিকুর রহমানের। শনিবার তার চোখের ব্যান্ডেজ খোলা হয়।
সিদ্দিকুরের সঙ্গে থাকা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুল আহসানকে উদ্বৃত করে সিদ্দিকুরের সহপাঠী শেখ ফরিদ বলেন, দেশে অপারেশনের পর সিদ্দিকুর বাম চোখের এক পাশ দিয়ে আলোর উপস্থিতি টের পাচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু চেন্নাই যাওয়ার পর সেই আলো আর দেখছিলেন না। শুক্রবার অস্ত্রোপচারের পর এখন আবার পাশ দিয়ে কিছু আলো সিদ্দিুকুর দেখছেন। এখন তিনি কতটুকু দেখবেন বা আদৌ দেখবেন কিনা, তা জানতে আরও চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় অপেক্ষা করতে হবে।