শোকাবহ ১৫ আগস্ট
৪২ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এ দিনে বঙ্গবন্ধু ভবনে ঘটেছিল সভ্যতার জঘন্যতম নির্মমতা। সেনাবাহিনীর একটি পথভ্রষ্ট ঘাতকচক্র মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াশীলদের চক্রান্তে নৃশংসভাবে হত্যা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে।
স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায়, এমন ঘটনা স্তব্ধ করে দিয়েছিলো বিশ্ববাসীকে। হোঁচট খেয়েছিল সদ্য স্বাধীন দেশের অগ্রযাত্রা। শুরু হয়েছিল নীলনকশা আর হত্যা-ক্যু'র রাজনীতি। মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িকতা। শুরু হয় রাষ্ট্রকে পেছনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া।
বাঙালি মুক্তির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে '৭৫ এর ১৫ আগষ্ট-৫৫ বছরের টান টান এক কিংবদন্তি। জীবনের পড়তে পড়তে শুধু লড়াই আর সংগ্রাম। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে তার কণ্ঠ এতুটুকুনও কাঁপেনি কোনোদিন।
যে মানুষটি জীবনের বেশিরভাগ সময় জেলে কাটিয়ে, মৃত্যুর হুলিয়া মাথায় নিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যার নামে পরিচালিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, বিজয়ের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকেই হতে হয় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার।
কতিপয় রাজনৈতিক কুচক্রীর যোগসাজসে, সেনাবাহিনীতে ঘাপটি মেরে থাকা একটি ষড়যন্ত্রী গোষ্ঠী শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করে থেমে থাকেনি। নির্বংশ করে দিতে চেয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে। শুধু সেদিন দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
১৫ আগস্ট, ভিত কেঁপে গিয়েছিল বাংলাদেশের। রাতারাতি পাল্টে যায় রাষ্ট্রযন্ত্র। মুখ থুবড়ে পড়ে গণতন্ত্র। প্রগতির পথে চেপে বসে সাম্প্রদায়িকতা। এ হত্যাকাণ্ডের তাৎক্ষনিকভাবে সারাদেশে কোন প্রতিক্রিয়া না হওয়াটা, আজও আত্মজিজ্ঞাসার জায়গা, বলছেন বিশ্লেষকরা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজে অনেক ষড়যন্ত্রীর মুখোশ উন্মোচিত হলেও আজও রাষ্ট্রীয়ভাবে এ ব্যাপারে কোন তথ্যানুসন্ধান হয়নি। তেমনভাবে উঠে আসেনি এর পেছনে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকার কথা।
দেশ গড়ার নতুন সংগ্রাম শুরু হতে না হতেই, ষড়যন্ত্রকারীরা মোড় ঘুরিয়ে দেয় মুক্ত স্বদেশের। উঁকি মারে পরাজিত প্রেতাত্মা। কুচক্রীদের সঙ্গীনে নি:শেষ হন জাতির জনক। তবুও অনিঃশেষ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ...