দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি
দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে— মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ মধ্যাঞ্চলের নদনদীর পানি এখনো বাড়ছে। এছাড়া বন্যাকবলিত অঞ্চলে বেশ কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও পানীয় জলের অভাব।
ফরিদপুর :
ফরিদপুরের গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে বন্যা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ডুবে গেছে ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেত, হাট-বাজার ও রাস্তা-ঘাট।
মাদারীপুর :
পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মাদারীপুরের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানির তোড়ে শিবচরের বিভিন্ন চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন দুর্গতরা। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। বন্যা কবলিত এলাকায় এখনো কোন ত্রাণ তৎপরাতা শুরু হয়নি।
মানিকগঞ্জ :
পদ্মা-যমুনাসহ মানিকগঞ্জের শাখা নদীতে পানি বাড়ায় এর তিনটি উপজেলাতেও বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও হাটবাজার ডুবে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে হরিরামপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
জামালপুর :
জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি সামান্য হ্রাস পেলেও এখনো তা বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। তবে ব্রহ্মপুত্র, ঝিনাই, জিঞ্জিরাসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বকশীগঞ্জ ও সদর উপজেলার বেশ কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে বন্ধ হয়েছে আরো ১৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দুর্ভোগে রয়েছেন সাত লাখেরও বেশি মানুষ। সরকারিভাবে জেলায় ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এদিকে, যমুনার প্রবল স্রোতে সরিষাবাড়ীর তারাকান্দি-ভুয়াপুর সড়কবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম :
কুড়িগ্রামে নদনদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেলেও তা বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরিবর্তিত রয়েছে জেলার নয়টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি। এসব এলাকায় চার লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। বন্যায় গত পাঁচ দিনে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই গবাদি পশু নিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব। সরকারি-বেসরকারিভাবে এসব এলাকায় ত্রাণ দেওয়া হলেও, প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম।
রংপুর :
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ঘাঘট ও যমুনেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে কাউনিয়া, পীরগাছা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্চ ও বদরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বদরগঞ্জের বেশ কয়েকটি পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। হুমকিতে রয়েছে শহর রক্ষা বাঁধ।
বানভাসিদের জন্য ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ মেট্রিকটন চাল ও শুকনো খাবার বিরতন করা হয়েছে।
নীলফামারী :
নীলফামারীর সৈয়দপুর ও ডিমলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও, বন্যার্তদের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। দুর্গতদের অনেকেই বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে, সরকারিভাবে ত্রান সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বন্যায় তিস্তাপাড়ের ৩০১টি পরিবার বিলীন হলেও সহায়তা পেয়েছেন মাত্র ৮০টি পরিবার।
মৌলভীবাজার :
অপরিবর্তিত রয়েছে মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতি। কয়েক মাস ধরে পানিবন্দী হয়ে রয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। রয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।