সাত খুন: হাইকোর্টে ১৫ জনের মৃত্যূদণ্ড বহাল
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ২৬ আসামির মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
এরমধ্যে প্রধান আসামি নূর হোসেন এবং র্যা বের সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও মাসুদ রানা রয়েছে।
আসামিদের করা জেল আপিল ও রাষ্ট্রপক্ষের করা ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ওপর রায়ে হাইকোর্ট ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।
রায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন নিহতদের স্বজনেরা। কেউ কেউ সন্তুষ্টির কথা বললেও পূর্বের রায় বহাল থাকা উচিত বলে মনে করেন অনেকে।
এদিকে, রায়কে দৃষ্টান্তমূলক বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।
তিনি বলেন, যাদের সাজা কমানো হয়েছে পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে তাদের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
এরআগে জজ আদালত ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তাদের মধ্যে ১১ জনের সাজা কমিয়ে হাইকোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। নিম্ন আদালতে নয় জনকে দেয়া বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডের রায় হাইকোর্টেও বহাল রয়েছে।
সকাল থেকে ডেথ রেফারেন্সের-আপিলের ওপর হাইকোর্টের রায় পড়া শুরু হয়।
মঙ্গলবার বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের বেঞ্চে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রায় পড়া শেষে ঘোষণা করা হয়।
এর আগে আসামিদের আপিলের রায় পিছিয়ে ২২ আগস্ট নতুন দিন ঠিক করে হাইকোর্ট।
ওইদিন বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের বেঞ্চে রায় ঘোষণার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ১০টার পর দুই বিচারক এজলাসে এসে রায়ের নতুন দিন দেন।
গত ২৬ জুলাই এ মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়, ওইদিন আদেশের জন্য ১৩ আগস্ট দিন ঠিক করে আপিল বিভাগ। বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের নতুন দিন দেয়।
এ বছর ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন সাত খুন মামলায় সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যা বের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদসহ ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়।
ওই রায়ে ৯ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২২ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে সাত খুন মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত নূর হোসেন, তারেক সাঈদসহ অন্য আসামিরা খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত নূর হোসেনসহ আসামিদের নিয়মিত ও জেল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আসামিদের বিচারিক আদালতের করা জরিমানা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। এরইমধ্যে এ মামলার ৬ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হল: সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের নেতা নূর হোসেন, র্যা ব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক দুই কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (চাকরিচ্যুত) এম মাসুদ রানা, হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, এ বি মো. আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হিরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়ব আলী, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আসাদুজ্জামান নুর, সৈনিক আবদুল আলিম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান, রহম আলী, আবুল বাশার, মোর্তুজা জামান, সেলিম, সানাউল্লাহ, শাহজাহান ও জামালউদ্দিন।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচ জন পলাতক। তারা হলো: সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, নূর হোসেনের সহকারী সানাউল্লাহ ও শাহজাহান।
১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিন, এএসআই বজলুর রহমান, সৈনিক নুরুজ্জামান, কনস্টেবল বাবুল হাসান, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, করপোরাল মোখলেছুর রহমান ও এএসআই কামাল হোসেন। শেষ দুজন পলাতক।
উল্লেখ, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারএর জামাতা বাদী হয়ে নূর হোসেনসহ ছয় জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন।