অশিক্ষিত মানুষেরই ধর্মই হচ্ছে কালচার আর শিক্ষিত মানুষের কালচারই হচ্ছে ধর্ম এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার
এম. রফিকুল উসলাম(চট্টগ্রাম) : উৎসব শেষ হয়েও যেন শেষ হলো না। প্রতিটি পর্বেই বাড়ছে উৎসবের আমেজ। দৈনিক ফেনীর সময় বিতর্ক উৎসব যত গ্র্যান্ড ফাইনালে দিকে এগোচ্ছে ততই শিক্ষার্থীরা তথ্য আর তত্ত্বও বাড়াচ্ছে ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে ‘দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশে বিদেশী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা জরুরী’ এ প্রতিপাদ্য বিষয়ে ক্ষুদে বিতার্কিকদের বক্তব্য, যুক্তি আর পাল্টা যুক্তি খন্ডনে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে বিতর্ক প্রতিযোগিতা। জেলা পর্বে অংশগ্রহনকারি প্রতিযোগিদের বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা জানিয়ে দিল সে কথা। বিকাল ৩টায় বিতর্ক উৎসবের উদ্বোধন করেন ভারপ্রাপ্ত জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত নাথ। ফেনী সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও দৈনিক ফেনীর সময় লেখক-পাঠক ফোরামের সভাপতি প্রফেসর উৎপল কান্তি বৈদ্য এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার ফাহমিদা হক। উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিতর্ক উৎসব উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান ও দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন ফেনী সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক মো: মোশারফ হোসেন, জেলা কালচারাল অফিসার এসএমটি কামরান হাসান ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বিতার্কিক এড. সাইফুদ্দিন শাহীন। স্কোরারের দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেছেন, বিদেশী সংস্কৃতি বলতে যদি অপসংস্কৃতি বুঝি সেটি হবে ভুলধারনা। ভালো দিকটা গ্রহন করে মন্দ দিকটা বর্জন করতে হবে। এজন্য পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষকরা উৎসাহিত করবে। পৃথিবীতে ভালো কাজের নাম ধর্ম, মন্দ কাজের নাম অধর্ম। কিন্তু বিদেশী সংস্কৃতি বলতে সবকিছু মন্দনীয় এই মৌলবাদী অভিব্যক্তিটা লালন করাও একধরনের পাপ। আমরা সংস্কৃতি ধারা পরিচালিত হই, নাকি ধর্ম ধারা পরিচালিত হই।
তিনি আরো বলেন, অশিক্ষিত মানুষেরই ধর্মই হচ্ছে কালচার আর শিক্ষিত মানুষের কালচারই হচ্ছে ধর্ম। শিক্ষিত মানুষের ঘুম আর অশিক্ষিত মানুষের ইবাদত থেকে উত্তম এটা ধর্মের বানী। সংস্কৃতির অংশ যদি আগে থেকে অদ্য পর্যন্ত যা কিছু বাঙ্গালীদের মধ্যে বিকশিত হতে হতে পরিশীলিত রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে এরকম প্রেক্ষাপট হয়নি। এতে করে সংস্কৃতির যে একটি ধারা ছিল তা বর্তমান ধারার সাথে অনেক প্রার্থক্য রয়েছে। স্বাধীনতার সময় পর্যন্ত এ দেশ যে চেতনায় স্বাধীনতা অর্জন করেছে সে চেতনার বিপক্ষে একটি বড় শক্তি ছিল। সে শক্তির আচার-আচরণ থেকে শুরু করে তাদের আগ্রাসন ভূমিকা আমাদের মধ্যে এমনভাবে ডুকিয়েছে সংস্কৃতি আমার ধর্ম না ধর্মই আমার সংস্কৃতি এমন প্রার্থক্য করতে ভুলে যাচ্ছি। আমি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা আর বিশ্বাস রেখে বলছি, সব ধর্মের নাম ধর্ম। সব মন্দের নাম অধর্ম।
সহকারি কমিশনার ফাহমিদা হক বলেছেন, আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। কমিটি গঠন হয়, কথা হয় কিন্তু কাজ হয় না। কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ম্যাজিষ্ট্রেট আর কেউবা গৃহীনি হয়ে সংসারের দায়িত্ব পালন করবে। বক্তব্যের জন্য কথা নয়, আমরা যা বলব তা কাজে প্রমাণ করব। বিদেশী আমরাও দেখি, তবে তা লালন করি না। সন্তানদেরও লালন করতে দিব না।
প্রফেসর উৎপল কান্তি বৈদ্য বলেছেন, সংস্কৃতির কি হয়েছে কি হবে আমি জানিনা তবে আমার কাছে এ প্রতিযোগিতা ভালো লেগেছে। বিতার্কিকরা তাদের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক দিয়ে প্রাণবন্ত করেছে। বিতর্ক একজন বললে অনেকে শোনে। অনেক কিছু জানার আছে, শিখার আছে। এমন একটি যুগোপযোগি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য দৈনিক ফেনীর সময় পরিবারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত; জঙ্গিবাদ. সন্ত্রাস, অপসংস্কৃতি ও মাদক বিরোধী সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এবং দক্ষ বিতার্কিক তৈরি করতে প্রথমবারের মত দৈনিক ফেনীর সময় বিতর্ক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতার জেলা পর্বে উপজেলা পর্যায়ের চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ হওয়া ১১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এ পর্বে উন্নীত ৮টি দল কোয়ার্টার ফাইনালে অংশ নেবে। বিতর্ক উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে জেলা প্রশাসন, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ও আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন। গত ৫ মে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো: আমিন উল আহসান ও পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমদ চৌধুরী কিরণের পরিচালনায় অংশগ্রহনকারি জেলার ৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে প্রশিক্ষন দেয়া হয়।