মিয়ানমারে তাণ্ডব: চট্টগ্রাম মেডিকেলে গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গার মৃত্যু
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন।
মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মিয়ানমারের দুই নাগরিক হাসপাতালে ভর্তি হন। এর ঘণ্টা তিনেক পর বেলা সোয়া ১১টার দিকে একজন মারা যান।
নিহত মো. মুসা (২২) রাখাইনের মংডু এলাকার মো. ইসমাইলের ছেলে। আহত মো. মোক্তার হোসেনের (২৭) বাড়িও মংডু এলাকায়, তার বাবার নাম গুল মোহাম্মদ।
এএসআই আলাউদ্দিন বলেন, আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তির পর তাদের সঙ্গে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মংডুর লাইনমাখালি পুলিশ ফাঁড়ির সামনে হামলা চলাকালীন তারা গুলিবিদ্ধ হন। পরে পালিয়ে শুক্রবার রাতে কক্সবাজার সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেন, সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেলে আসেন।
রাখাইন রাজ্যের সীমান্তচৌকিতে হামলার জের ধরে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন রোহিঙ্গারা।
রয়টার্সের তথ্য মতে, মিয়ানমার সরকার দিন দশেক আগে রাখাইনে বিপুল সংখ্যক সেনা নামানোর পর থেকে বহু রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।
গতকাল শুক্রবার রাত ৯টা থেকে আজ-শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কোস্টগার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা নাফ নদী দিয়ে টেকনাফে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭৩ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছেন।
চট্রগ্রাম জোনের কোস্টগার্ডের অপারেশন কর্মকর্তা লে. শেখ ফখর উদ্দিন খান বলেন, নাফনদী দিয়ে শাহপরীর দ্বীপ এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশেকালে রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা আটক করা হয়। তাদের মানবিক সহযোগিতা দিয়ে ওই সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কোস্ট গার্ড ২৪ ঘণ্টা নাফনদী ও এর আশপাশের সীমান্তে টহলে অব্যাহত রয়েছে।
কোস্টগার্ডের শাহপরীর দ্বীপ স্টেশনের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার সোলেমান কবির বলেন, নাফ নদীজুড়ে কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। মিয়ানমারের মংডু এলাকা থেকে নারী শিশুসহ ৫৬ জন রোহিঙ্গা বহনকারী একটি নৌকা বাংলাদেশে ঢুকছিল। এ সময় একই পয়েন্ট দিয়ে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর হয়েছে।
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাত ৯টার দিকে নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফ উপজেলার কয়েকটি এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশ করা চার জন শিশু, আট জন নারী, পাঁচ জন পুরুষসহ ১৭ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করা হয়।
তিনি বলেন, নাফ নদী ও পুরো সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সতর্ক পাহারায় রয়েছে— যারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন তাদের আটক করে পুনরায় নিজ দেশে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছে।
কোস্টগার্ড ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২০৮ কিলোমিটার স্থল ও ৬৩ কিলোমিটার জলসীমানা রয়েছে। গত দুই দিনে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ২১৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে সমন্বিতভাবে হামলার ঘটনার
দায় স্বীকার করেছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি নামের একটি সংগঠন।
মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতের ওই হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২ সদস্য সহ কমপক্ষে ৭১ জন নিহত হন।
দীর্ঘদিন ধরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসছে বাংলাদেশ।
জাতি সংঘের শরণার্থী বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, গত বছরের শেষ দিকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরু হলে আরও ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
গত কয়েক দশকে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি সরকারের। তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ। তবে এখনো প্রত্যাশিত সাড়া দেয়নি মিয়ানমার।