স্মার্টফোন-কম্পিউটারে দেখা যাবে ভার্চুয়াল বঙ্গবন্ধুর বাড়ি
দেশের স্বাধীনতার স্থপতির সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবন এবং ব্যক্তি জীবনের নিরব সাক্ষী হয়ে আছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট এই বাড়িটিতেই বাংলাদেশের জন্য কলঙ্কের কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিলো জাতির পিতাকে বিদ্ধ করা বিপথগামী সেনাদের বুলেট। ১৯৯৪ সাল থেকে জাদুঘরে রূপান্তরিত এই বাড়িটি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের স্মৃতিচিহ্নে জাতির গৌরব এবং শোকগাঁথা বলে যাচ্ছে বিনা শব্দে।
তবে ইচ্ছা থাকলেও দূরত্বসহ নানা কারণে জাতির জনকের বাড়িতে অনেকেরই যাওয়া হয়ে ওঠে না। তাদের জন্য এবং প্রযুক্তি প্রজন্মের কথা চিন্তা করেই বঙ্গবন্ধুর এই স্মৃতি জাদুঘরকে স্মার্টফোন-কম্পিউটারের পর্দায় দেখানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই জাদুঘরটির ভার্চুয়াল সংস্করণ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
কম্পিউটারে-স্মার্টফোন স্ক্রিনে জাদুঘরটির ভার্চুয়াল সংস্করণে বাস্তবে ঘুরে বেড়ানোর আমেজ দিতে পুরো জাদুঘরটির ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্য ধারণ করা হবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে যেকোনো জায়গা থেকে যে কেউ যখন ইচ্ছা বঙ্গবন্ধুর বাড়িটির ভেতর ঘুরে দেখতে পারবেন। একই সঙ্গে জাদুঘরটির ভার্চুয়াল গাইড হিসেবে স্মৃতি চিহ্নগুলোর বর্ণনা করতে অডিও যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
একনজরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর
১৯৮১ সালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ১৯৯৩ সালে বাড়িটি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে তুলে দেন তারা দুই বোন। তারপর বাড়িটিকে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে’ রূপান্তরিত করার কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট জাদুঘরটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
ছায়া সুনিবিড়, সবুজ গাছে ঘেরা সাদা রঙের তিনতলা মূল বাড়ি এবং এর পাশের সম্প্রসারিত আরেকটি ভবন নিয়েই জাদুঘর। বাড়িটির সামনে ধানমন্ডি লেক।
বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের মূল বাড়ির প্রথম তলার শুরুতেই রয়েছে শেখ মুজিবর রহমানের বিশাল একটি ছবি।
এরপরেই রয়েছে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টে নিহত সবার ছবি এবং কিছু আসবাবপত্র। এই ঘরটি আগে ছিল ড্রইং রুম, এখানে বসে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই ঘরের পাশের ঘরটি ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের পড়ার ঘর, এখানে তিনি লেখালেখির কাজও করতেন। ১৯৭১ সালে এই ঘর থেকেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠিয়েছিলেন।
এরপর দোতালায় ওঠার সিঁড়ি, সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় এখনো চোখে পড়বে সেই রাতের তাণ্ডবলীলার নিদর্শন, দেয়ালের গায়ে বুলেটের ক্ষত। সেখানে শিল্পীর তুলিতে আঁকা বঙ্গবন্ধুর গুলিবিদ্ধ অবস্থার একটি প্রতিকৃতি।
দোতলায় গিয়ে প্রথমেই যে ঘরটি দেখা যায়,সেটি বঙ্গবন্ধুর বাসকক্ষ। এরপরের প্রথম কক্ষটি বঙ্গবন্ধুর শোবার ঘর, এর পরেরটি শেখ রেহানার শোবার ঘর। বঙ্গবন্ধুর শোবার ঘরের দেয়ালে এখনও গুলির চিহ্নগুলো অবিকৃত অবস্থাতেই রাখা হয়েছে, সাক্ষী দিচ্ছে দেশের কলঙ্কজনক এক অধ্যায়ের।
তৃতীয় তলাটার এক পাশে পড়ার ঘর। এই তলায় বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল আর সুলতানা কামালের ঘর। এই ঘরের দেয়ালেও রয়েছে গুলির চিহ্ন, এছাড়া পিয়ানো, সেতার ইত্যাদি আগের মতো করেই সাজানো আছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের হত্যাযজ্ঞ, লুটপাটের পর যা কিছু ছিলো সব দিয়ে আগের মতো করেই সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে পুরো বাড়িটাকেই।
জাদুঘরটির সম্প্রসারিত অংশটি চারতলা। এর প্রতি দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ভূমিষ্ঠ হবার সংগ্রামী ইতিহাসের ছবি। সেই সঙ্গে এই দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের আত্মত্যাগের কাহিনী। এখানে আছে বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন সময়ে নানা আলোকচিত্র। মহাত্মা গান্ধী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ মুজিবের ছবি, ভাষা আন্দোলনের ছবি।
এখানে থাকা বিভিন্ন প্রদর্শন সামগ্রীর মধ্যে আরও রয়েছে ছোট্ট শেখ রাসেলের খেলার জিনিস যেমন- বল, ব্যাট, হেলমেট, সুলতানা কামালের সঙ্গে তার ছবি ইত্যাদি। এছাড়া বঙ্গবন্ধু ব্যবহৃত পাইপ, চশমাসহ, হেয়ার ক্রিমের কৌটাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র।