কালীগঞ্জে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার ভাতা স্থগিত
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের কালীগঞ্জে তালিকাভূক্ত ও ভাতাভোগী শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা ও উৎসব ভাতা স্থগিত করেছে উপজেলা প্রশাসন। ঈদের পূর্বে উপজেলার ৬শ ৩৪জন ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে প্রায় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার ভাতা স্থগিত করায় তাঁরা এখন দিশেহারা। তালিকাভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও ব্যাংকে টাকা ছাড় না হওয়ায় তাঁদের অনেকেই ধারে ধারে ঘুরছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতার পরিমান বৃদ্ধি ও উৎসব ভাতা প্রদান শুরু করে। চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা কার্যক্রমের আওতায় গাজীপুরে ১ম কিস্তিতে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০১৭ প্রান্তিকে) মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা, একটি উৎসব ভাতা ও গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বকেয়া উৎসব ভাতা বাবদ ১৬ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা আর্থিক মঞ্জুরী প্রদান করা হয়। এবার ঈদুল আযহার পূর্বে প্রতিজন মুক্তিযোদ্ধা ৫২ হাজার ৫শত টাকা করে সম্মানী ও উৎসব ভাতা পাবেন। সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার উপসচিব মোঃ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত স্মারক ৪৮.০০.০০০০.০০৬.৩৪.০০১.১৭-৩২৭, তারিখ ২০ জুলাই ২০১৭ নং পরিপত্রে বলা হয়, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিস্বাক্ষরিত সনদ/ গেজেট/ মুক্তিবার্তা (লাল বই)/ ভারতীয় তালিকা যাচাইপূর্বক (সফটকপি) মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা প্রদান করা যাবে।’ কিন্তু জারীকৃত এই পরিপত্রকে পরিহার করে উপজেলা প্রশাসন একক ক্ষমতাবলে ঈদের পূর্বে শুধুমাত্র গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ও উৎসব ভাতার টাকা প্রদান স্থগিত ঘোষনা করে।
একাধিক মুক্তিযোদ্ধা জানান, আমরা রবিবার থেকে সম্মানী ভাতার জন্য ঘুরছি। ব্যাংক থেকে জানতে পারি আমাদের টাকা উপজেলা হতে ছাড় করা হয়নি। এই টাকায় আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও মৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের ভরণ পোষণ ব্যয় নির্বাহ করা হয়। ঈদের পূর্বে ভাতা না দেয়ায় ছেলে মেয়েদের নতুন জামা কাপড় কিনে দিতে পারব না। ঈদের দিন দুটো ভাল-মন্দ খাওয়াব তাও হলো না।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ সোনালী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক পরিতোষ চন্দ্র দে’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ীই আমরা ভাতা প্রদান করছি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ মোস্তফা মিয়া জানান, পরিপত্র অনুযায়ী আমি ওয়েবসাইটে তথ্য যাচাই করে কালীগঞ্জের ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রদান করি। কিন্তু তাঁরা আমার প্রদত্ত তালিকা বাদ দিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো ভাতা প্রদান করছেন। ফলে প্রায় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ঈদের আগে আর ভাতা পাচ্ছেন না।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদান কমিটির সম্পাদক ও সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন জানান, পরিপত্র অনুযায়ীই আমরা ভাতা প্রদান করছি। তাহলে প্রায় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে।
পরে ভাতা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মোঃ মুশফিকুর রহমান জানান, যাচাই বাছাইকালীন সময়ে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হয়েছিল শুধুমাত্র তাদের সম্মানী ও উৎসব ভাতা স্থগিত করা হয়েছে। তবে তাঁদের সংখ্যা শতাধিক নয়। ঈদের পরে কমিটির সভা আহবান করে তাঁদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।