রক্ষক যখন ভক্ষক গাংনীতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে স্কুলের জমি রেজিষ্ট্রী করে নেয়ার অভিযোগ
মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ গাংনীতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে সরকারী স্কুলের জমি রেজিষ্ট্রী করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ১৯ নং পীরতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতা ইউনুছ আলীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ওসর্বোপরি বিদ্যালয়ের নামীয় জমি গোপনে রেজিষ্ট্রী করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পীরতলা গ্রামের সচেতন মহল সূত্রে জানা গেছে,পীরতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।এসময় অশিক্ষিত, অবহেলিত,শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষকে শিক্ষার আলো জ্বালাতে পীরতলা গ্রামের একাধীক ভূমি মালিকের দানকৃত ২ একর ৮০ শতাংশ জমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে স্কুলটি সরকারী হলে বিদ্যালয়ের সম্পত্তি সরকারের শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুকুলে চলে যায়।তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের যোগসাজশে বর্তমান সভাপতি ইউনুছ আলী তৎকালীন প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজ করে অন্যান্য সদস্যদের ভূল বুঝিয়ে ১৯৭৫ সালে স্কুলের ৮ শতক জমি ই্উনুছ আলী রেজিষ্ট্রী করে নেয়।গ্রামের অন্য এক প্রভাবশালী নেতা নওশাদ আলী ও ইউনুছ আলী আবারও স্কুলের নামে আত্তাহীম মন্ডলের দানকৃত জমি (যার দাগ নং সাবেক ৭৯৭ হাল দাগ নং ৫০৭) বিক্রয় করে স্কুলের উন্নয়নে কাজ না করে আত্মসাৎ করেছে।
আরও জানা গেছে, উপজেলার বেতবাড়ীয়া মৌজার অন্তর্গত জে এল নং-২৪, খতিয়ান নং-০২, আরএস-০২ এর আওতাভূক্ত ১০টি দাগে ১৮ জন মালিক এক দলিলে কম-বেশী করে সর্বমোট ১ একর সাড়ে ৪৬ শতক জমি শিক্ষা বিভাগের নামে দান করে দেন। পরবর্তীতে আবারও ১৯৭৪-৭৫ সালে ১০৭১৫, ১০৭১৬ ও ১১১৬০ এবং ১১১৬১ দাগে আরও ৪ দলিলে যথাক্রমে ১৩, ৩২, ৪৯ ও ৪০ শতক মোট ১ একর ৩১ শতক জমি দান করে। জমির মালিকানা শর্তে স্কুলের নামে ১ একর সাড়ে ৪৬ শতক জমি রেকর্ড হলেও তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের অবহেলা ও গাফিলতির কারনে বাদবাকী জমির রেকর্ড হয়নি।এই জমি এতদিন কোথায়, কার কাছে, কিভাবে রয়েছে তা আগের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দুর্নীতিবাজ আব্দুর রাজ্জাক,(মেয়াদকাল-১৯৬৯ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত), মুরাদ আলী (মেয়াদকাল-২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত), আব্দুল মতিন মেয়াদকাল-২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত) এবং বর্তমান সভাপতি প্রভাবশালী ইউনুছ আলী কোন খোঁজ খবর নেয়নি।বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা নুরুন্নাহার জমি জমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভা আহবান করলেও সভাপতি নানা টালবাহানা করে এড়িয়ে যায়।এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে,বর্তমান সভাপতি ইউনুছ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে গড়ে উঠা পীরতলা নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারী সম্পত্তি একই দাগের জমি অবৈধভাবে রেজিষ্ট্রী করে দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা নুরুন্নাহার জানান, স্কুলের জমি নিয়ে নানা সমস্যার কথা শুনেছি। আমি অনেক দেন দরবার করে স্কুলের জমির সম্প্রতি কয়েকটি দলিল পেয়েছি সে মতে আমি অফিসিয়ালি ২ একর ৩৫ শতক জমি আছে বলে জানি।শুনেছি স্কুলের নামে বিনিময়কৃত আরও জমি বিভিন্ন মাঠে রয়েছে।এসব জমির কোন হদিস ন্ইে।বিভিন্ন ভূমিদস্যুরা অবৈধভাবে জবরদখল করে রেখেছে।কমিটিকে বার বার অবহিত করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়না।
অন্যদিকে একই গ্রামের আব্দুল করিম কালু (ইটভাটা মালিক) স্কুলের ১০শতক জমি মালিকানা দাবী করে জবরদখল করে রয়েছেন।এব্যাপারে কালুর একজন ঘনিষ্ঠজন মুরাদ আলী জানান, স্কুলের পাশে কালুর ব্যক্তি মালিকানা উত্তর -দক্ষিণ লম্বা ১০ শতক জমি রয়েছে।গ্রামের অন্যজন আনারুল ইসলাম জানান, মুরাদের উত্তর দক্ষিন লম্বা জমি থাকলেও বর্তমানে সে স্কুলের একটি কক্ষসহ পূর্ব-পশ্চিম লম্বা ভাবে দখল করে নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছে।
এব্যাপারে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইউনুছ আলী জানান, জমি রেজিষ্ট্রী করে নেয়ার অভিযোগ সত্য।পূর্বের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক কিভাবে আমার নামে জমি বিক্রি করেছে আমি জানিনা। আমি ঐ জমি দখল নেব না । স্কুলের জমি স্কুলেরই থাকবে। স্কুলের জমি ফেরত দেয়ার কথা বললে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।সরকারী সম্পত্তি কিভাবে ক্রয়-বিক্রয় করা হয়েছে এসব উত্তর খুঁজতে সচেতন মহল উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা ও সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক স্কুলের জমি উদ্ধার ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়েছেন।