যশোরে চাষীদের চোখে সোনালী আাঁশের ন্যায্য মূল্যের স্বপ্ন।
শহিদুল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধি।।শার্শা উপজেলার টেংরা গ্রামের আছিয়া বেগম, তছলিমা খাতুন, রাহিমা খাতুন, রাফিজা বেগম, খোদেজা খাতুন, আকলিমা খাতুন, খুকি বেগম আর সামটা গ্রামের ছায়রা খাতুন, খাদিজা খাতুন, রিজিয়া খাতুন, দেউলির অমেলার এখন দম ফেলার সময় নেই। পাট ধোয়া আর আঁশ ছাড়ানোর কাজে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত তারা। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় সময়মতো পাট কেটে তা বিভিন্ন জলাশয়ে জাগ দিতে পারায় কৃষকরা এখন সোনালী আাঁশের সোনালী স্বপ্নে বিভোর।
চলতি মৌসুমে শার্শার পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো এখন উৎসবের আমেজ পেয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে শার্শায় পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১৩ হাজার নারী। পুরুষদের পাশাপাশি এই কাজে অংশ নিয়ে কিছুটা বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন তারা। বেনাপোলের উত্তর বারোপোতা গ্রামের মোরিয়ম বেগম জানান, এক আঁটি পাট ছাড়ালে পাওয়া যায় ২০ টাকা।
একজন নারী দিনে ২০ থেকে ৩০ আঁটি পাটের আঁশ ছাড়াতে পারেন। অন্য সময় ক্ষেতমজুর হিসেবে কাজ করলে যে টাকা মেলে, পাট ধোয়ার কাজে পাওয়া যায় তার তিনগুণ বেশি টাকা। এ কারণেই সংসারের কাজের পাশাপাশি পাট মৌসুমে পাট ছাড়ানোর কাজে যোগ দিচ্ছেন নারীরা। অনেকে আবার কাজটি করছেন পাটকাঠি নেয়ার শর্তে। এতে সংসারের ব্যয় নির্বাহে কিছুটা হলেও সহযোগিতা করতে পারছেন তারা।
শার্শা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ হীরক কুমার সরকার জানান, উপজেলায় দুই হাজার নারী নিজের জমিতে চাষাবাদ করেন। অন্যের জমিতে মজুর হিসেবে কাজ করেন আরো প্রায় চার হাজার নারী। “তবে মৌসুমে পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানোর কাজ করেন এ জনপদের প্রায় ১৩ হাজার নারী।” এদিকে উপজেলার অনেক হাট-বাজারে শুরু হয়েছে আগাম পাট বিক্রি। পুটখালির পাটচাষী আব্দুর রহমান জানালেন, প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। প্রতি আঁটি পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
উপজেলার স্বরূপদাহ গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান ভুইয়া জানান, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় চার বিঘা জমিতে লাগানো পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তবে পরে বৃষ্টি হওয়ায় ফলন ‘মোটামুটি ভালোই’ হয়েছে। চার বিঘা জমি থেকে পাওয়া ৫০ মণ পাট এবার ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন বলেই তিনি আশা করছেন। এ বছর সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করা বেনাপোলের বারোপোতা গ্রামের কৃষক আব্দুল মোমিনও ভালো দাম পাওয়া আশায় রয়েছেন।
কৃষি কর্মকর্তা হীরক বলেন,“এবার উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। শার্শায় পাট চাষের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বিপরীতে চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ হেক্টরে।” মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি কম হওয়ায় পাটের আবাদ শুরু হয় কিছুটা দেরিতে। তবে পরে বৃষ্টি হলে কৃষকরা আগ্রহ ফিরে পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। হীরক বলেন, “পাট চাষে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে কৃষি বিভাগ। সব মিলিয়ে উপজেলায় পাটের ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি কৃষক ভালো দাম পাবেন।