রোহিঙ্গাদের পক্ষে ও সুচির বিরুদ্ধে দুর্বার জনমত গড়ে তোলার আহবান! .ড.আখতারুজ্জামান।
Avj-Avgxb,wmwbqi ÷vd wi‡cvUv©i
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যু হাল আমলের কোন সমস্যা নয়, অনেক বছর আগের সমস্যা এটি। আজ পর্যন্ত এর কোন প্রতিকার প্রতিবিধান বা সমাধান হয়নি। বরং সাম্প্রতিক সময়ে এ সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। নিছক প্রতিবেশী দেশ হওয়ার কারণে এটা একটা উটকো সমস্যা হিসেবে আমাদের উপরে ভর করেছে।
ব্যাপক জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশ স্রোতের মত লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া আমাদের অর্থনীতির উপর বিরাট একটা চাপ, সন্দেহ নেই; কিন্তু মানবিকতার বিবেচনায় রোহিঙ্গারা এদেশে আশ্রয় পাচ্ছে শুধু সেটার প্রতিফলনটা একটু ভিন্ন; বরং নামেমাত্র মাঝে মাঝে পুশব্যাক করার কারণে আমাদের জাতীয় ভাবমূর্তি অনেকটাই ক্ষূন্ন হচ্ছে!!
সরকারি ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও অনান্য মন্ত্রীরা বিক্ষিপ্তভাবে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন বটে; কিন্তু এখন অব্দি সেখান থেকে কোন ভাল খবর আসছে না। বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে, দলমত নির্বিশেষে দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণকে সাথে নিয়ে। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর সরকারের সৃষ্ট কোন সমস্যা নয়, এটা একটা জাতীয় সমস্যা, তাই সমাধানের রূপরেখা জাতীয়ভাবে প্রনয়ন করাই সঙ্গত।
মুসলমান দেশ হিসেবে তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়া এ ব্যাপারে সবচে বেশি সোচ্চার রয়েছে । গতকাল তুরস্কের ফার্স্টলেডি এমিনি এরদোয়ান ও সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন একটা ইতিবাচক খবরের বার্তাবাহকও বটে! অনান্য মুসলিম বিশ্ব যেন কুম্ভকর্ণের গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, ঘুম আর ভাঙতে চাইছে না। মুসলমানিত্ব নিয়ে যে পাকিস্থান বড়াই করে সেই তথাকথিত ইসলামের ধ্বজাধারী পাকিস্থান রীতিমত মিয়ানমার সরকারকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে বলে খবরে প্রকাশ! তাঁদেরকে ধিক্কার জানাই। ধিক! শতধিক!!
আশার বিষয় হলো জাতিসংঘ বিষয়টিকে মানবিক বিপর্যয় হিসেবে দেখে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে সাধুবাদ জানিয়েছে।
আমরা হতাশ হচ্ছি ভারতের অমানবিক কার্যক্রম দেখে।
আমরা আশা করেছিলাম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর অতি সাম্প্রতিক মিয়ানমার সফরে ইতিবাচক কিছু একটা হবে। কিন্তু না! রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোন আশা জাগানিয়া বক্তব্য আসেননি বরং অং সান সুচি রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোন ভাল খবর দেননি। উপরন্তু সুচি রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মিথ্যা প্রচার বলে মোদী বাবুকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। মোদী বাবুও তাঁর ইয়ার দোস্ত সুচির কথাকে সর্বৈব সত্য বলে ঢেঁকিতে আনন্দ নাড়ু কুটতে কুটতে ফিরেছেন বলেই মনে হচ্ছে।
অনান্য মুসলিম বিশ্ব এ ব্যাপারে খুব বেশি সোচ্চার বলে মনে হচ্ছে না, যেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। যেভাবে নিরীহ নিরস্ত্র আবাল বৃদ্ধ জনতার উপরে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী হামলা চালাচ্ছে এরচে বড় মানবিক বিপর্যয় আর কী হতে পারে! প্রতিদিন প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাদের উপরে মানবতা বিরোধী যে অত্যাচারের রোমহর্ষক কাহিনীর সচিত্র বিবরণ কল্পিত বিশ্বের পরতে পরতে ছড়িয়ে পড়ছে সেটাতে মানুষের মনুষ্যত্বের ছিটেফোঁটাও চোখে পড়ছে না । মুসলমান কেন যদি রোহিঙ্গারা বিধর্মী নাস্তিক হয় তবুও এই বিপদে তাদের মানবিক আশ্রয় দেয়া জরুরী!
রোহিঙ্গাদের সমস্যা ও এটার সমাধান নিয়ে এই অধমের কিছু পর্যবেক্ষণ ও স্থূল পরামর্শ রয়েছে:
★ আমাদের দেশের জন্যে রোহিঙ্গা শরনার্থী একটা বাড়তি চাপ হলেও মুসলমান নয়, মানুষ হিসেবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিনম্র আহবান জানাবো আমাদের সরকার প্রধানকে ; কারণ খুব সফট্ হার্টেড একজন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এই স্পর্শকাতর অতি মানবিক বিষয়ে হার্ডলাইনে যাওয়াটা কোনভাবেই সমীচীন হবে না। সরকারিভাবে আমাদের বিজিবি এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রোহিঙ্গা শরনার্থীদের শতভাগ পুশইন হয় ঠেকাতে পারেননি অথবা মানবিকতার নিরিখে তাঁরা সেভাবে সেটা করেননি। উপরন্তু চরম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এদেশে অনুপ্রবেশ করতে যেয়ে ইতোমধ্যে অসংখ্য শরনার্থীর সলিল সমাধি হয়েছে; যে দৃশ্যপট আমাদের মত অনেক বিশ্ব বিবেককে অঝোরে কাঁদিয়ে চলেছেন। ফলে এ ব্যাপারে তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে। পুশব্যাক করতে হলে সেখানেও যেন মানবতা বিঘ্নিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
★ শান্তির নবেল নেত্রী লেডি সুচি, ভুজং ভাজুং যা কিছুই বোঝান না কেন, বাংলাদেশকেই অকাট্য তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করে মায়ানমারের সামরিক জান্তার অত্যাচার আর শান্তি নেত্রীর অশান্তি আর হিংস্রতার খবর বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দিতে হবে।
★ সর্বদলীয় সভা ডেকে এ ব্যাপারে ব্যাপক জনমত প্রচারের কোন বিকল্প নেই। মিটিং মিছিল মানববন্ধন অব্যাহত রাখতে হবে।
★ বিশ্ব বিবেকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে সুচিকে শান্তির নোবেল প্রদান পৃথিবীর ইতিহাসে সবচে কলঙ্কিত একটা অধ্যায় বিবেচিত হবে কাল থেকে কালান্তরে।
★ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেদেশে যতই তাফালিং করুক না কেন, তাদেরকে এতটা ডর করার কিছু নেই। তাদেরকে সীমান্ত মহড়া দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে,তোমাদের ক্ষ্যামা দেয়ার সময় হয়েছে।
★ ভারত যেহেতু মিয়ানমারের বড্ড ইয়ার দোস্ত তাই ভারতকেও প্রকৃত সত্যের আলোকে ন্যয়ের পথে আনার চেষ্টা করতে হবে।
★ আমার জানামতে একসময় বাংলাদেশের শতভাগ মানুষ সুচির পক্ষে ছিল কিন্তু এখন সেটা একেবারে রিভার্স হয়ে গেছে। এই সত্যটি কয়েক কোটি গণ স্বাক্ষর সংগ্রহ করে বিশ্ব দরবারে পেশ করতে হবে; জানাতে হবে রোহিঙ্গাদের উপরে নির্বিচার গণহত্যার খবর ও শান্তির নবেলধারী সুচি মাতারীর নজিরবিহীন নিরবতার চিত্র।
★ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে জানান দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারে ও এ দেশের মানুষ অনেক বেশি মানবিক!
★ ইসলামী বিশ্বের বিবেককে জাগিয়ে তোলার সকল প্রকার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
★সব কিছুর উপরে বেশি চাপ অব্যাহত রাখতে হবে মিয়ানমার সরকার ও ম্যাডাম সুচির উপরে।
★ আমার বিশ্বাস আমরা যদি সঠিকভাবে রোহিঙ্গাদের উপরে মিয়ানমার সরকারের গণহত্যার কাহিনী তুলে ধরতে পারি তাহলে মানবিক সাহায্যের নামে যে বৈদেশিক সাহায্য আসবে তাতে করে আমাদের অর্থনীতির উপরের চাপটা অনেকখানি প্রশমিত ও নির্ভার হবে।
আমি রীতিমত স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি রোহিঙ্গাদের উপরে মানবিক আচরণের কারণে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বসভায় শান্তির দূত হিসেবে বিশেষভাবে সম্মানিত হতে চলেছেন।