দুদকের কার্যক্রমে হতাশ ঝিনাইদহবাসী গন শুনানীতে মাস হয়ে গেলও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নেই কোন ব্যবস্থা
ঝিনাইদহ সংবাদদাতাঃ
ঝিনাইদহ জেলার সর্বত্র মহাসড়ক গুলোর বেহাল দশা। সরকার সড়কগুলি সংস্কারের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যায় করলে ঝিনাইদহ জেলার সওজয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর বেপরোয়া দুর্নীতির কারনে কোন সুফল বয়ে নিয়ে আসেনি। দেখলে মনে হয় এই সড়কগুলি হয়তবা কোন এককালে মেরামত করা হয়েছে কিন্তু না এই বছরেই কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে সড়ক মেরামত বাবাদ। কালের সাক্ষী সড়ক গুলি দেখলে বুঝার উপায় নেই মনে হচ্ছে কোন যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের সড়ক। এই সড়কের বেহাল দশার কারনে প্রতিদিন ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা, সড়কের দুই পাশে প্রতিনিয়ত পড়ে থাকতে দেখা যায় উল্টে রয়েছে বাস ট্রাক। এই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা অগণিত হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আহত তার স্বজনদের আর্তনাদ আর কান্নার করুন হৃদয় বিদারক দৃশ্য। জেলাবাসীর প্রশ্ন আর কত জীবন যাবে? এদিকে, সওজয়ের যশোর সার্কেল তত্ত¡বধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে বার বার সড়কের সৃষ্টি অসংখ্য খানা গর্ত মেরামতের জন্য তাগাদা দেওয়া হলেও সেদিকে কোন খেয়াল নেই। ফের ঈদের নিরাপদে যান বাহন চলাচল নিশ্চিত করার জন্য ফের সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও কোন রকমে দায় সারা গোছের করলেও সড়কের অবস্থা আগের মত রয়ে গেছে। কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এদিকে ঝিনাইদবাসী দুদুকের গন শুনানির পর ভেবে ছিল তার দুর্নীতি করার জন্য দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা হবে। কিন্তু দুদুকের গন শুনানিতে উপস্থিত না হয়ে গোপনে দুদুক কর্মকর্তার সাথে রাত্রে ঝিনাইদহ সার্কিট হাউজে দেখা করে দফা রফা করেছেন বলে অফিসের কর্মচারীদের সাথে বলেছেন। সেই সাথে সে বলেছে যে যেখানেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করুক তাতে লাভ নেই। এদিকে গনশুনানি বেলা ১ টার দিকে শেষ হলেও দুদুক কর্মকর্তাদের রাত্রে সার্কিট হাউজে অবস্থান করা জনসাধারণ সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা শুরু করেছে। ঝিনাইদহ গুজব উঠেছে দুদুক ঐ রাত্রে ঝিনাইদহ থেকে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা নিয়ে গেছে। সেই সাথে সেলিম আজাদ খানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না হওয়াতে ঝিনাইদহ বাসীর মনে সেই সন্দেহ স্থায়ী আসন পেতে বসতে যাচ্ছে। যদিও তাকে গত ৫ ই সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জে বদলি করেছে তার দপ্তর।
তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফ সিদ্দিক এই এক মাসে মাত্র ৩ দিন অফিস করেছে। তাও যে কোন দিন। ইতিমধ্যে সওজয়ের তেল চুরির ঘটনা ঝিনাইদহ জেলার মানুষের মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে একের পর এক এত বড় দুর্নীতি করার পর তার শাস্তি না হওয়ায় দুদকের কার্যক্রমে হতাশ হয়ে পড়ছে ঝিনাইদহ বাসী। গত ৯ ই আগস্ট রোজ বুধবার সকালে ঝিনাইদহের ডাঃ কে আহম্মদ পৌর কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গনশুনানীতে অভিযোগের পাহাড় দেখে দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম বলেন, সরকারী সব অফিস আজ দুর্নীতে নিমজ্জিত। তাদের বিরুদ্ধে মানুষের এতো অভিযোগ তাই প্রমান করে। তিনি হুসিয়ার উচ্চারণ করে বলেন, জনগণ রুখে দাড়ালে দুনীর্তিবাজরা পালানোর পথ পাবে না। তিনি বলেন, দুদক দুনীর্তিবাজদের দমনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে। অনুষ্ঠানে তিনি সরকারী একাধিক কর্মকর্তাকে সতর্ক করে দেন। তিনি এমন প্রানবন্ত গনশুনানীর জন্য স্থানীয় সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান। গনশুনানীতে সবচে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ জমা হয় সড়ক ও সেতু মন্ত্রানালয়ের অধীন সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেন কাজ না করে অথবা নিন্মমানের কাজ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হচ্ছে। ফলে অল্প দিনেই পিচের রাস্তাগুলো উঠে যাচ্ছে। তবে জবাব দেওয়ার জন্য ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খান অনুষ্ঠানে আসেন নি। জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে তাকে চিঠি দেওয়া হলেও তিনি অফিসেই বসে ছিলেন। অনুষ্ঠানে রেজিষ্ট্রি অফিস, পুলিশ, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল, ওষুধ প্রশাসন, ভুমি অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিআরটিএ, খাদ্য নিয়ন্ত্রক, শিক্ষা প্রকৌশল, এলজিইডি, সমাজসেবা, কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, প্রধান ডাকঘর, পিআইও, ইউপি চেয়ারম্যান, কৃষি স¤প্রসারন, পরিবার পরিকল্পনা, জেলা শিক্ষা অফিস, প্রাথমিক শিক্ষা, গনপুর্ত, ওজোপাডিকো, পানি উন্নয়নবোর্ড, পাসপোর্ট অফিস ও ঝিনাইদহ পৌরসভার বিরুদ্ধে নামে বে-নামে অভিযোগ করেন। এ সব অফিসের পক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জবাব দেন।
“এবার আওয়াজ তুলুন, স্বোচ্চার হোন” এ শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে জেলা প্রশাসন ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে দিনব্যাপী এই গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের দুর্নিতী দমন কমিশনের কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অভিযোগ শোনেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দুদক পরিচালক মনিরুজ্জামান, ডিডি জাহিদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আছাদুজ্জামান, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক আবু ইউসুফ মোহাম্মদ রেজাউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রাসক (রাজস্ব) খোদেজা খাতুন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাহাবউদ্দিন আহমেদ, ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাবেক উপাধ্যক্ষ এন এম শাহজালাল, আমিনুর রহমান টুকু, হাফিজুর রহমান, খোন্দকার মিজান ও জয়া রানী চন্দসহ জেলার সকল সরকারী অফিসের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ জাকির হোসেন। গণশুনানীতে শাতাধীক অভিযোগ জমা হলেও ৬৬টি আবেদন আমলে নিয়ে শুনানী করা হয়। শুনানীতে অনেক সরকারী অফিসের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। মানুষের সেবা দেওয়ার নামে ঘুষ বানিজ্য ও হয়রানীর বিষয়টি তুলে ধরে ভুক্তভোগীরা। দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়ে বলেন, আপনার সঠিক পথে চলুন, মানুষের সেবা দিন। তা না হলে আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ দুদক কর্মীরা মাঠেই রয়েছে। ফাঁদ পেতে আপনাদের ধরা হবে। আর একবার ধরা পড়লে আপনাদের চাকরী জীবনের সব অর্জন ধুলোয় মিশে যাবে। অুনষ্ঠানে পুলিশ ভেরিফিকেশন, চাকরী প্রদান ও জিডি এন্ট্রির নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগের জবাবে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাহাবউদ্দিন আহমেদ অভিযোগকারীদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, এ সব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের ডেপুটি ডাইরেক্টর মোঃ জাহিদ হোসেনের সাথে মোবাইলে কথা বললে তিনি জানান, ঝিনাইদহ সড়কের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সেলিম আজাদ খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দুদুক চেয়ারম্যানের নিকট অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে, তার অনুমোদন হয়ে গেলে অতি শিঘ্রই বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হবে।