লক্ষ্মীপুরে বাণিজ্যিকভাবে বেড়েছে আখের চাহিদা
কামরুল হোসেন,লক্ষ্মীপুর
বাণিজ্যিকভাবে লক্ষ্মীপুরে ইক্ষু বা আখ চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। স্থানীয় বাজারগুলোতে আখের চাহিদা বাড়ায় ভাল দাম পাওয়ার কারনে আবারও জনপ্রিয়তা পেয়েছে আখ। এখানকার উৎপাদিত আখ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাহিরে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল আখ হলেও নতুন জাতের কোন আখ কিংবা নতুন পদ্ধতিতে চাষাবাদ চালু না করায় আখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ কম বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ২২০ হেক্টর জমিতে ইক্ষুর (স্থানীয়ভাবে আখ হিসেবে পরিচিত) আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮০ হেক্টর, রায়পুর উপজেলায় ৭০ হেক্টর, রামগঞ্জ উপজেলায় ৩০ হেক্টর, রামগতি উপজেলায় ১০ হেক্টর ও কমলনগর উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে।
জানা যায়, কৃষকরা আখ চাষের জন্য নীল চাষের ক্ষেত ও পাটের জমিই বেছে নেন। মূলত চিনিকলে সরবরাহের জন্যই আখ চাষ শুরু হয়। ভালো দামে নগদ টাকায় বিক্রি করা যেত বলে কৃষকরা আখ চাষে আগ্রহী ছিলেন। তখন গরুচালিত দেশীয় মাড়াই কল দিয়ে গুড় তৈরি করা হতো। সে সময় বাঙ্গালীদের প্রধান মিষ্টান্নই ছিল গুড়। কিন্তু একবিংশ শতাব্দির শুরুতে চাষিরা তাদের উৎপাদিত আখ ন্যায্য দামে বিক্রি করতে না পেরে আখ চাষ কমিয়ে দেয়। আখের গুড়ের পরিবর্তে কম দামে সয়লাব মিশ্রিত গুড় বাজার দখল নেয়ায় আখের গুড়ের চাহিদাও কমে যায়। আখের আবাদী জমির সাথে সাথে আবাদের পরিমাণ কমে যায়। ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় আখ বিক্রিতে পাইকাররাও নিরুৎসাহিত হন।
সদর উপজেলার মান্দারী এলাকার কয়েকজন আখ চাষি জানান, আখ চাষে সার ও কীটনাশক তেমন ব্যবহার করতে হয় না। কম পরিশ্রমে, অল্প ব্যয়ে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় কৃষকরা আখ চাষে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মূলত আশ্বিন মাসে নতুন করে আখচাষ শুরু করা হলেও ভালো ফলনের জন্য কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে চারা রোপন করা ভালো। প্রথমে জমির মাটি ১ ফুট গর্ত করে পাশে তিনফুট রেখে মাটির সাথে বিভিন্ন সার মিশিয়ে ভালোমত চেলে আখের চারা রোপন করা হয়। পরের বছর ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে আখ বিক্রির উপযুক্ত হয়। এখানকার কৃষকরা এ বছর ২০৮ ও সুরেশ্বর এ দুইটি জাতের আখের আবাদ করেন। আখ চাষ করে ব্যাপক ফলন পাওয়ায় তাদের মাঝে আখ চাষের আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নতুন চাষীরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় আখ আবাদে খরচ কম হওয়ায় আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। এছাড়া জেলায় আখ চাষীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করারও দাবী জানান চাষীরা।
সদর উপজেলার চরভূতা গ্রামের চাষি মোঃ ছিদ্দিক জানান, বর্ষজীবী ফসল আখ চাষ করা হলেও উৎপাদনের তুলনায় দাম কম পেলে কৃষকদের আগ্রহ কমে যায়। তবে চলতি মৌসুমে আখের ন্যায্য দাম পেয়ে তিনি খুশি। তিনি জানান, গত মৌসুমে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ৪০ শতক জমিতে তিনি আখ চাষ শুরু করেন। চলতি মৌসুমে ভাদ্র মাসের শেষের দিকে তিনি বিক্রি শুরু করেন। এক সপ্তাহে তিনি পাইকারি ও খুচরা ৫০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছেন। একটি আখের চারা থেকে নতুন নতুন চারা গজিয়ে আখ ক্ষেত ভরে যায় বলেও তিনি জানান।
একই গ্রামের আখ চাষি মনির জানান, সুরেশ্বর জাতের আখ মিষ্টি হওয়ায় এবং বাজারে এর চাহিদা থাকায় তিনি গত বছর ৪৮ শতক জমিতে আখের আবাদ করেন। জমি তৈরি, চারা রোপন, কীটনাশক ও পরিচর্যা করতে তাঁর ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চলতি মৌসুমে আখের ভালো ফলন হওয়ায় ৭-৮ দিনে তিনি ৫০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেন। আকারভেদে পাইকারি ১০০ আখ তিনি বিক্রি করেন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। তাঁর জমিতে গত মৌসুমের চাষকৃত এখনো অর্ধেকের বেশি আখ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন জানান, লক্ষ্মীপুরে চাষীরা সাধারণত দুই জাতের আখ চাষ করেন। এখানকার মাটির গুনগতমান খুবই ভাল। আর সময়মত আখের চারা রোপন করতে পারলে ফলন অবশ্যই ভাল হয়। আখ চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হলেও সরকারীভাবে তাদের বীজ ও সার দেয়া হলে চাষীরা আখ চাষে আগ্রহ আরো বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। চলতি মৌসুমে আখের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে বলেও জানান তিনি।