২০০৬ সালে বেনাপোলবন্দরে ভয়াবহ অগ্নিকা- তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ
মীর ফারুক শার্শা (যশোর) প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে ২০০৬ সালে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্তে প্রতিবেদনে জানা যায় বেনাপোল বন্দররে অগ্নিকান্ডের মূল কারন ছিল কেমিক্যাল (দাহ্য) জাতীয় পদার্থ। ২০১৬ সালে ২৩ নং গোডাউনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন (সচিব) এম সাফায়েত হোসেনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় । তারা দীর্ঘ ১১ মাস তদন্ত শেষে অগ্নিকান্ডে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্ত প্রতিবেদন জমার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল বন্দরের উপ পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম।
বাংলাদেশের সাথে ভারতে আমদানি রপতানি যতগুলো স্থল বন্দর আছে, সেগুলো থেকে বেনাপোল থেকে ভারতের সাথে যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দরকে বেশি পছন্দ করে, কিন্তু বেনাপোল পণ্য চুরি, স্থান সংকট, অব্যবস্থাপনা ও বন্দরের চলমান নানা সমস্যার কারনে ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দরের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে বলে যানা যায়।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে মাত্র ৩২ টি গোডাউন ১টি রপ্তানি টার্মিনাল ১টি ট্রাক টার্মিনাল রয়েছে। বেনাপোল বন্দরে সর্বমোট পণ্য ধারন ক্ষমতা ৪০ হাজার মেট্রিক টনের একটু বেশি। কিন্তু বন্দরের ধারন ক্ষমতার চেয়ে বিভিন্ন পন্যের আমদানি রপ্তানি দ্বিগুন হয়। ফলে পন্য রাখার অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই কারনে সাধারন পণ্য ও কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ রাখা হয়।
গত বছর ২ই অক্টোবর ২৩নং গোডউনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ১৩০ জনের ও বেশি আমদানি কারকের পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রায় ১০০০ কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ বন্দর থেকে পণ্য চুরি, অব্যবস্থাপনা, অগ্নিকান্ডের কারন বন্দর কতৃপক্ষকে জানালেও তারা কোন কথা কর্নপাত করেন না। বন্দর কর্মচারীরা সাধারন পণ্য গোডাউনে কেমিক্যাল বা দাহ্য পদার্থ নামাচ্ছে ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দরের গোডাউন এক সুপারিন্টেন্ডেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন বন্দরের যে পোষ্টিং শাখা আছে। তাহারা যদি সাধারন পণ্য গোডাউনে কেমিক্যাল রাখার অনুমতি দেয় তাহলে আমাদের করার কিছু থাকেনা তিনি আরো বলেন বেনাপোল বন্দরে যে সকল সিএন্ডএফ এজেন্ট আছে, তাদের মধ্যে অনেকে বন্দরে এক এক টি গোডাউন দখল করে রেখেছে। তাদের কথা না শুনলে তারা বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়। তাদের কারনেও বন্দরে জায়গা সংকট হয়।
গত কয়েক দশক ধরে বেনাপোল বন্দরের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়।
বন্দর সূত্রে জানা যায় ১৯৯৬ সালে ১০ টি পণ্য গোডাউনে অগ্নিকান্ডে ৩০০ কোটি টাকা, ২০০১ সালে ২৬ নং গোডাউনে অগ্নিকান্ডে ৩০ কোটি টাকা, ২০০৫ সালে ১০ ও ১৫ নং গোডাউনে অগ্নিকান্ডে ৭০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে ৩৫ নং গোডউনে অগ্নিকান্ডে ৫০০ কোটি টাকা। একই বছরে ২২ শে জুন ২৭ নং গোডাউনের অগ্নিকান্ডে ১৫০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ২৩ নং গোডাউনে অগ্নিকান্ডে ক্ষতির পরিমান প্রায় ১০০০ কোটি টাকা। ফলে কয়েক দশকে বেনাপোল বন্দর থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী অগ্নিকান্ডের কারনে পুজি হারিয়ে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু অগ্নিকান্ডে গত দুই দশকে ছয় বারের বেশি অগ্নিকান্ডে আমদানি কারকদের হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি সাধিত হলেও আজ পর্যন্ত কোন আমদানি কারক বন্দর থেকে ক্ষতি পূরন পায়নি।
বেনোপোল সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব মফিজুর রহমান স্বজন বলেন বন্দরের পণ্য চুরি অব্যবস্থাপনা, কাষ্টমস কর্মচারীদের অনিয়মের বিষয়ে একাধিক বার বন্দর কতৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলে তেমন কোন কাজ হয়না।
বেনাপোল বন্দরের উপ পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ রেজাউল করিম বলেন কেমিক্যাল জাতীয় পণ্যের জন্য আলাদা গোডাউন আছে। কিন্তু সাধারন পণ্য গোডাউনের অনিয়ম করে কেন কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ রেখেছিল তার তদন্ত চলছে, বন্দরে আমদানি কারকদের ক্ষতি পূরন দেয়ার কোন নিয়ম নাই বলে তিনি যানান।