এখনও পোড়ানো হচ্ছে রোহিঙ্গাদের গ্রাম: অ্যামনেস্টি
মিয়ানমারে রাখাইনে এখনও রোহিঙ্গাদের বাড়ি পোড়ানো হচ্ছে তার প্রমাণ তুলে ধরেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশাল।
জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া অং সান সু চি ভাষণ এবং মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘে দাবি করেন সহিংসতা আর হয়নি।
স্থানীয়ভাবে পাওয়া ভিডিও এবং উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি শুক্রবার বলেছে, রোহিঙ্গারা ফিরলে যে থাকবে, সেই উপায়ও রেখেনি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের গ্রাম একের পর এক জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান নিয়ে সমালোচনার মুখে গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর সু চি বলেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর রাখাইনে সেনা অভিযান চলছে না।
দুদিন আগে জাতিসংঘে ভাষণে মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ভান থিও বলেন, রাখাইনে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে।
তাদের বক্তব্যের পর অ্যামনেস্টি শুক্রবার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, রাখাইনে এখনও যে বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে, তার অন্তত তিনটি ভিডিও পেয়েছেন তারা।
গত ২২ সেপ্টেম্বরের উপগ্রহ চিত্রেও রোহিঙ্গা গ্রামে জ্বালিয়ে দেয়া ঘর থেকে উড়া ধোঁয়া চিহ্নিত করার কথাও জানায় মানবাধিকার সংস্থাটি।
অ্যামনেস্টির ক্রাইসিস রেসপন্স পরিচালক তিরানা হাসান বলেন, এই প্রমাণ অং সান সু চির বক্তব্যের অসারতা তুলে ধরেছে। তিন সপ্তাহ পরেও আমরা দেখছি, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অবসান হয়নি। রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর, গ্রাম জ্বলছেই। মনে হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ফেরার কোনো উপায়ই রাখা হচ্ছে না।
রাখাইনে এই জাতিগত নির্মূল অভিযান বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
অ্যামনেস্টির ক্রাইসিস রেসপন্স বিভাগের পরিচালক তিরানা হাসান বলেন, রোহিঙ্গাদের শুধুমাত্র বাড়িঘর থেকে তাড়িয়েই তারা ক্ষান্ত হচ্ছে না, বরং কর্তৃপক্ষ এটা নিশ্চিত করতে চাইছে যে রোহিঙ্গাদের ফিরে আসার জন্য কোনো আশ্রয়ই থাকবে না।
এদিকে, নিরাপত্তা পরিষদের অর্ধেক সদস্য দেশ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফ করার আহ্বান জানিয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ইথিওপিয়া আগামী সপ্তাহে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করুক তেমনটাই চায় সদস্য দেশ সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, মিসর, সেনেগাল এবং কাজাখস্তান।
অপরদিকে, বিদেশি কূটনীতিকরা আগামী সপ্তাহে সংঘাত কবলিত রাখাইনের পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাবেন বলে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার নেইপিদোতে রাখাইন বিষয়ক সুপারিশ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সুচি'র বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাখাইন পরিদর্শনের আহ্বান জানান সুচি।
মিয়ানমারে দমন-পীড়নের শিকার ৪ লাখ রোহিঙ্গা গত তিন সপ্তাহে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আগে থেকে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে বাংলাদেশে।