দূর্নীতি আর অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে গেছে-জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশনে-জড়িত কর্মকর্তা কর্মচারি।
জেলা ব্যুারো প্রধান:জয়পুরহাট:- জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশন-ইতিহাস বলে বৃটিশ সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল জয়পুরহাট থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অল্প সময় ও নিরাপদে যাত্রী ও তাদের মালামাল তাদের গন্ত্যবে পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ সরকারও যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবার উদ্দেশ্যে রেলওয়েতে জনবল নিয়োগ করেছে যতেষ্ট। কিন্তু সেই জনবলই এখন যাত্রী সেবা বাদ দিয়ে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ মুলক কর্মকান্ডে।
আজ ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার সরেজমিনে জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে স্টেশন কর্মকর্তা, কর্মচারি ও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত জিআরপি পুলিশের বিরুদ্ধে স্টেশনে উপস্থিত যাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া গেল বেশ কিছু অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ।
এর মধ্যে রয়েছে ঈদ শেষে কাজে যোগদানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে আসা চাকুরিজীবি যাত্রী,ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত যাত্রী,রেলওয়ে স্টেশনে চায়ের দোকানদার,পান,বিড়ির দোকানদার সহ জয়পুরহাট পৌর এলাকায় বসবাসরত সাধারন জনগন।
ঢাকার উদ্দেশ্যে গমন ইচ্ছুক যাত্রী রেজভী আহম্মেদ বলেন-আমি কোরবানীর ঈদে পরিবারের সাথে ঈদ করার জন্য জয়পুরহাট আসি ২৯ আগষ্ট এবং সেই দিনই ৫ সেপ্টেম্বর রাতের একতা ট্রেনের জয়পুরহাট--ঢাকা ফেরৎ টিকেট নেওয়ার জন্য জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশনের টিকেট কাউন্টারে গেলে দায়িত্বরত ব্যক্তি প্রথমে টিকেট নাই শেষ হয়ে গেছে জানায়। পরে অনেক অনুরোধের পর তিনি টিকেট জোগার করে দিবেন বলে, আমার কাছে ৩৯০ টাকার টিকেট ১০০০ টাকা দাবি করেন-আমি শেষমেস তা ৬০০ টাকায় কিনতে বাধ্য হই।তিনি জানান ক্ষোদ স্টেশনে কর্মরত কর্মচারি যদি টিকেট কালো বাজারি করে,তাহলে সাধারন যাত্রী সমাধানের জন্য যাবে কোথায়? এ অভিযোগ পাওয়া গেল আরও বেশ কিছু যাত্রীদের কাছে।
এ দিকে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত বেশ কিছু যাত্রী অভিযোগ করেন-জয়পুরহাট স্টেশনে যাত্রীদের কোন নিরাপত্তা নাই।নেই বসার মতো কোন যায়গা। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর যাত্রীদের ওয়েটিং রুম থাকলেও তা বসার মতো না।
বাথরুমে পানি নাই,চেয়ারগুলো ময়লা সহ বিভিন্ন সমস্যা।বৃষ্টি হলে গোটা স্টেশনে টিন ফুটা হয়ে পানি পড়ে,ফ্যান আছে গোটা স্টেশনে মাত্র ২ টি।
তার উপর আছে মোটর সাইকেলের যন্ত্রনা।প্লাটফরমের উপর দিয়ে সারাদিন সারারাত কিছু ছেলে যেভাবে হর্ন বাজিয়ে মোটর সাইকেল চালায় মনে হয় এটা প্লাটফরম না, মহাসড়ক। যাত্রী সেবার উদ্দেশ্যে নির্মিত একমাত্র ফুট ওভার ব্রীজ ঝুকিপুর্ন,যাত্রীদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত জিআরপি পুলিশ নামেই পুলিশ-কোন দায়িত্ব পালন করে না।
এছাড়াও জিআরপি পুলিশের বিরুদ্ধে যাত্রীদের কাছ থেকে ২-৩ গুন বেশী টাকা নিয়ে টিকেট দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে, অনেক সময় বেশী টাকা নিয়ে ট্রেনের এ্যাটেন্ডেন্টকে ম্যানেজ করে বিনা টিকেটেও ট্রেনে তুলে দেওয়ার অভিযোগ আছে বলে জানান- স্টেশন কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের এক সদস্য।
আমির হোসেন -পয়েন্টম্যান- জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশন জানান-এ সব অনৈতিক কাজে জড়িত নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মচারী ও জিআরপি পুলিশ।আমরা যারা পুরাতন কর্মচারী তাদের কিছু বললে উত্তর দেয় ৫ লক্ষ্য টাকা দিয়ে চাকুরি নিয়েছি,খালি বেতন দিয়ে টাকা উঠবে?এ ছাড়া টিকেট কালো বাজারি সম্পর্কে সত্যতা স্বীকার করে আমির হোসেন জানান-টিকেট কালো বাজারির ঘটনা সত্য এবং এর সঙ্গে জড়িত টিকেট কাউন্টারের দায়িত্ব প্রাপ্ত ছয় জন কর্মচারি।
জয়পুরহাটের কিছু গন্যমান্য ব্যক্তির অভিযোগে রেলওয়ে স্টেশনের পুর্ব পার্শ্বে বউ বাজার থেকে বৈরাগীর মোড় পর্যন্ত ১২ মাস পানি জমে থাকা,রেল লাইন অপরিষ্কার,উত্তর পার্শ্বে ফুলতলি মোড়ে মাদক বিক্রি,একমাত্র ফুট ওভার ব্রীজ ঝুকিপুর্ন সহ বহুবিধ সমস্যার কথা উঠে আসে।
সকল অনৈতিক কাজের ব্যপারে সহকারী স্টেশন মাস্টার (নাম প্রকাশ না করার অনূরোধ) জয়পুরহাট কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান-টিকেট কালো বাজারি সর্ম্পকে আমি মৌখিক ভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি,এখনও লিখিত পাই নাই। পাইলে ব্যবস্থা নিব।যাত্রী সেবার মান উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি জানান- আমি নতুন এসেছি-চেষ্টা করবো পর্যায়ক্রমে সেবার মান উন্নয়নের। স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রেল কর্মকর্তা জানান-নতুন নতুন নিয়োগ পেয়ে অনেক রেল কর্মকর্তাই জড়িয়ে পড়ছে অনৈতিক কাজে। তারা কোন না কোন ভাবে সরকার দলীয় বলে কেউ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। তবে স্টেশন মাস্টার তার দায়ীত্ব যথাযথ ভাবে পালন করলে এসব অনৈতিক কাজ বন্ধ ও যাত্রী সেবার মান উন্নয়ন করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। সঙ্গে স্থানীয় সাংসদ মহোদয় সহ রেল মন্ত্রনালয়ের বিশেষ দৃষ্ট ও যথাযত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিশেষ অনূরোধ জানান-জয়পুরহাটের সচেতন নাগরিক বৃন্দ।