রোহিঙ্গাদের জন্য রান্না করা খাবার বিতরণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি
রোহিঙ্গাদের জন্য রান্না করা খাবার নিয়ে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে বিতরণ করলে তা থেকে মারাত্মক দূষণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এই কাজটি থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা।
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনরত জনস্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ডা. ইকবাল কবীর চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: অনেকে হয়তো সহানুভূতি থেকেই রোহিঙ্গাদের জন্য খাবার রান্না করে ট্রাকে করে নিয়ে এসে বিতরণ করছেন। কিন্তু এতে রোহিঙ্গারা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে।
‘ট্রাক থেকে খাবারের প্যাকেট ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই খাবারের প্যাকেট রোহিঙ্গারা যে যেভাবে পারছে সংগ্রহ করে খাচ্ছে।এই খাদ্য থেকে দূষণ ছড়ানোর আশঙ্কা প্রবল বলে আমরা এটিকে নিরুৎসাহী করছি।’ বলেন এ রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ।
তবে কেউ খাদ্য সহায়তা দিতে চাইলে সরকারি বা সেনাবাহিনীর যে খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা আছে সেখানে দান করার পরামর্শ দিয়েছেন।
গত দুইদিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে জনস্বাস্থ্যের যে অবস্থা তিনি দেখেছেন তাকে এক কথায় অবর্ণনীয় ও অমানবিক বলে উল্লেখ করেছেন ডা. ইকবাল কবীর।
‘বিভিন্ন ক্যম্প ঘুরে যে অবস্থা দেখলাম তা অবর্ণনীয়। আমি রীতিমত দুঃখ ভারাক্রান্ত’।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারী ও শিশুরা যে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে তা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে উল্লেখ করে এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সমন্বিতভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলা। সেনাবাহিনী চেষ্টা করছে সবকিছুকে একটা নিয়মের মধ্যে আনতে।
তিনি জানান, গত ১২-২১ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোট ৬১ হাজার ২৬৯ জন অপুষ্টি ভোগা শিশুকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫৯ জন মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। ৪ হাজার ২৬০ জন ভুগছে অন্যান্য অপুষ্টিজনিত সমস্যায়।
এছাড়া ২ হাজার ৫৪৪ জন গর্ভবতী মাকে গর্ভকালীন প্রয়োজনীয় দেওয়া হয়েছে, সঠিকভাবে বুকের দুধ পান করানোর ব্যাপারে কাউন্সেলিং করা হয়েছে ১৮৪ জন মাকে।
ডা. ইকবাল কবীর বলেন, স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় সবার আগে প্রয়োজন বিশুদ্ধ পানি। তা না হলে ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে নতুন টিউবওয়েল স্থাপনসহ বিশুদ্ধ পানি সরবারহের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ স্বাস্থঝুঁকি থাকলেও সে রোগ ক্যাম্পের বাইরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম বলে জানালেন এ রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাছাড়া তারা যে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সেগুলো ছোঁয়াচে নয়। তাই তা ক্যাম্পের বাইরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম।