রোহিঙ্গা সংকট: আমরা যুদ্ধ চাইনা শান্তি চাই
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কার্যকরি ব্যবস্থা দেখতে চায় বাংলাদেশ।
বুধবার দুপুরে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নয় রাষ্ট্রের দূতদের সঙ্গে বৈঠকে সুপারিশ তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা যুদ্ধ চাইনা শান্তি চাই।
বাংলাদেশের প্রত্যাশা আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার—এ কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আগামী কাল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জোরালো সিদ্ধান্ত আসবে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতিতে বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ৯ সদস্য দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, সুইডেন, ইতালি, মিসর ও জাপানের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা অংশ নেন। এসময় তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন তাদের কাছে।
প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হককে সঙ্গে নিয়ে ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনও বিবাদে জড়াতে চায় না শান্তি চায় বাংলাদেশ আর এরজন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সহযোগিতা দরকার।
মন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের সকল সদস্যই রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও বাংলাদেশকে সমর্থন দিচ্ছে।
এদিকে, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আবার বৈঠকে বসছে। সেখানে রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সে বৈঠকে ব্রিফ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেখানে যাতে এমন কোনও সিদ্ধান্ত আসে যেন নির্বিঘ্নে রোহিঙ্গারা দেশে ফিরে যেতে পারে। সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য- এসব শরণার্থীকে নিজ দেশে ফেরৎ পাঠানো।
তিনি আরও বলেন, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির দফতরের ইউনিয়ন মন্ত্রী ইয়ো টিন্ট সোয়ের ঢাকা সফরে আসবেন। তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চান তবে তারিখ পিছিয়েও যেতে পারে।
এদিকে, এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে চার লাখে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো তুলে ধরে এর নিরসনে পাঁচ দফা প্রস্তাব বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরেন।
প্রস্তাব:
১. অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা
২. অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা
৩. জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা
৪. রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা
৫. কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।