ঝিনাইদহের শচীন্দ্র নাথের লাশ খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আইসিইউতে রেখে কর্তৃপক্ষের মোটা টাকা আদায়
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার কাতলাগাড়ী গ্রামের সতীশচন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস (৭৫)। ৩ দিন আগে তিনি মারা গেছেন বলে দাবি করছেন স্বজনরা। তারপরও তার লাশ আইসিইউতে রেখে কথিত চিকিৎসা দিয়েছেন খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আদায় করা হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। অবশেষে জোর করে রোগী ছাড়িয়ে নেওয়া হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানকার ডাক্তাররা জানান, রোগী মারা গেছেন বেশ আগেই। মৃত্যের স্বজনদের দাবি, খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে লাশ রেখে তাদের কাছ থেকে নানা কৌশলে মোটা টাকা আদায় করেছে কর্তৃপক্ষ। এমনকী ‘লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেললে যে কোনো সময় রোগী মারা যাবে’ বলে স্বজনদের ভয় দেখান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নিহতের স্বজনরা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েক নেত্রী হস্তক্ষেপ করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এভাবে পাঁচ দিনে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধ ও বেড ভাড়ার নামে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার কাতলাগাড়ী গ্রামের সতীশচন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে শচীন্দ্র বিশ্বাস (৭৫) স্ট্রোক করলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। গাজী মেডিকেল কর্তৃপক্ষ রোগীকে হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে প্রতিদিন নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং হাসপাতালের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কেনা বাবদ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে বিল করতে থাকেন। এদিকে, রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রোগী শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের মেয়েজামাই খুলনার ক্রিসেন্ট জুটমিলের প্রকৌশলী সুনীল এ বিষয়ে তার স্বজনদের সহযোগিতা কামনা করেন। এর ফলে খালিশপুর থানা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শারমীন রহমান শিখা, সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা আক্তার লিমা ও সোনাডাঙ্গা থানার সাধারণ সম্পাদক নূরজাহান নূরীসহ ১০-১৫ জন নেত্রী শনিবার সকাল ৯টার দিকে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। প্রথমে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে পরিচয় দেওয়ার পর তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়।
নারী নেত্রী তাসলিমা আক্তার লিমা অভিযোগ করেন, তারা আইসিইউতে ঢুকে দেখতে পান রোগীর পালস, হার্টবিট কিছুই নেই। এ সময় তারা বুঝতে পারেন রোগী মারা গেছেন। কিন্তু বের করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কথা বললে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘রোগী লাইফ সাপোর্টে রয়েছে, লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেললে যে কোনো সময় মারা যেতে পারে’। এভাবে তারা প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা বিল নিয়েছেন ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নারীনেত্রী শারমিন আক্তার শিখা বলেন, ‘আমরা আইসিইউতে ঢুকে দেখতে পাই রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং রক্তচাপ নেই। দেখে রোগী আগেই মারা গেছেন বলে মনে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন২২ হাজার টাকা করে বিল নিয়েছেন। সর্বশেষ শনিবারও রক্ত পরীক্ষা বাবদ এক হাজার ৩০০ টাকা নেন। এছাড়া পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে বলেন।’খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া) ডা. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘খুমেক হাসপাতালে ভর্তির আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে তা কত সময় আগে তা বলা সম্ভব হচ্ছে না।’তিনি বলেন, ‘রোগীর স্বজনরা তিন দিন আগে রোগী মারা যাওয়ার দাবি করলেও সেটি যৌক্তিক নয়।’ এ বিষয়ে রোগীর মেয়ে কবিতা বিশ্বাস ও অন্যান্য স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারাও বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে তারা শোকাহত থাকায় পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির কর্ণধার ডা. গাজী মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ম্যানেজার আশিকুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘রোগী লাইফ সাপোর্টে থাকলেও তাদের হেফাজতে মারা যায়নি।’লাইফ সাপোর্ট খোলার পর খুমেক হাসপাতালে ভর্তিতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তার ৬৫ হাজার টাকা বিল হলেও নারী নেত্রীরা সুপারিশ করে ৪০ হাজার টাকা বিল দেন বলে জানান আশিকুর। উল্লেখ্য, এর আগেও গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী রেখে অর্থ-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এমনকী এ ধরনের নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ একাধিক কর্মকর্তাকে দশ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন।