বাতিল করা হলো এভ্রিলের ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ খেতাব
সমালোচনার মুখে বাতিল করা হলো ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন ঘোষিত জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলের নাম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রতিযোগিতাটির আয়োজক প্রতিষ্ঠান।
বুধবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্ট-ইনে সন্ধ্যায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য গত জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য তখন ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়। আয়োজক প্রতিষ্ঠান অন্তর শোবিজের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় ২৫ হাজার আগ্রহী নাম নিবন্ধন করেন। তাদের মধ্য থেকে কয়েকটি ধাপে বাছাই করা হয়েছে সেরা ১০ জনকে। এই ১০ জন হলেন রুকাইয়া জাহান, জান্নাতুল নাঈম, জারা মিতু, সাদিয়া ইমান, তৌহিদা তাসনিম, মিফতাহুল জান্নাত, সঞ্চিতা দত্ত, ফারহানা জামান, জান্নাতুল হিমি ও জেসিয়া ইসলাম। এই প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন ১৮ নভেম্বর চীনের সানাইয়া শহরে অনুষ্ঠেয় ৬৭তম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।
জান্নাতুল নাঈমের বিয়ের কাবিননামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ জান্নাতুল নাঈমের বয়স এখন ২৭ বছর ১ মাস। চার বছর আগে যখন তার বিয়ে হয়েছিল তখন তার বয়স ছিল ২৩ বছর চার মাস।
জান্নাতুল নাঈম ১৯৯০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তবে ফেসবুক লাইভসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তিনি দাবি করছেন, বিয়ের সময় তার বয়স ছিল ১৬ বছর। চন্দনাইশ পৌরসভার কাজি অফিস থেকে জান্নাতুল নাঈমের বিয়ের কাবিননামার একটি কপি সাংবাদিকের কাছে তুলে ধরেন।
২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রী মিলনায়তনে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ আয়োজনের গ্র্যান্ড ফিনাল অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন উপস্থাপক শিনা চৌহান এ প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে জান্নাতুল সুমাইয়ার নাম ঘোষণা করেন।
উপস্থাপকের নাম ঘোষণার পরই মাইক্রোফোন হাতে তুলে নেন এ প্রতিযোগিতার আয়োজক প্রতিষ্ঠান অন্তর শোবিজের চেয়ারম্যান স্বপন চৌধুরী। তিনি চ্যাম্পিয়ন হিসেবে জান্নাতুল নাঈমের নাম ঘোষণা করেন। তা নিয়ে আয়োজক ও বিচারকের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়।
‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’-এর নাম ঘোষণার মঞ্চের এ ঘটনা মুহূর্তেই ফেসবুকের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে যায়।
বিচারকেরা একটি দৈনিক পত্রিকাকে জানায়, তাদের রায়ে নয়, আয়োজকের পছন্দে নির্বাচন করা হয় ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’!
জান্নাতুল নাঈম নামের যে প্রতিযোগীকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছে, তিনি নাকি তাদের পছন্দের তালিকায় ছিলেন না। যাচাই-বাছাই শেষে বিচারকেরা ভোট দিয়ে যাকে প্রথম নির্বাচিত করেন, আয়োজকের নির্দেশে উপস্থাপক তাকে দ্বিতীয় ঘোষণা করতে বাধ্য হন। এমন কাণ্ডে বিস্মিত হন গ্র্যান্ড ফিনালের ছয় বিচারক।
তারপর থেকে জান্নাতুল নাঈমের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ৫ নম্বর বরমা ইউনিয়নের সেরন্দি গ্রামের রাউলিবাগ এলাকায় খোঁজ নেয়া হয়। চন্দনাইশ পৌরসভার কাজি অফিস থেকে পাওয়া কাবিননামা অনুযায়ী ২০১৩ সালের ২১ মার্চ চন্দনাইশ পৌর এলাকার বাসিন্দা ও কাপড় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মুনজুর উদ্দিনের সঙ্গে জান্নাতুলের বিয়ে হয়। বিয়ের দেনমোহর ছিল আট লাখ টাকা। বিয়েতে কাজি ছিলেন আবু তালেব। একই বছরের ১১ জুন তালাকনামায় স্বাক্ষর করেন জান্নাতুল।
এরপর অন্তর শোবিজের চেয়ারম্যান স্বপন চৌধুরী বলেন, ‘এভ্রিলকে (জান্নাতুল নাঈম) নিয়ে অনেক কথা আমাদের কানে এসেছে। বিয়ের খবরও শুনেছি। আমরা সব তথ্য চীনে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পাঠাচ্ছি। এরই মধ্যে আমরা বিচারকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। সবার সঙ্গে আলোচনা করে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সহযোগিতায় প্রথম আলো।