যেভাবে দেশ সেরা রাজশাহী কলেজ সীমাবদ্ধতার মধ্যেও রাজশাহী কলেজ তার গৌরবের উত্তরাধিকার বহন করে চলছে।
মেধাবী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমাহারে কলেজ পর্যায়ে এখন দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। গৌরময় ঐতিহ্যের ধারায় শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে কলেজটি নিরলসভাবে কাজ করে চলছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমান। বৃহস্পতিবার পদ্মাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম এর সঙ্গে সাক্ষাতকারে এ সব কথা বলেন তিনি। পদ্মাপাড়ে ১৮৭৩ সালে ৩৫ একর এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী কলেজ। বর্তমানে ২৪টি বিভাগের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। আর শিক্ষক আছেন ২৪৮ জন। কলেজ প্রশাসনের আন্তরিকতায় এই ছোট ক্যাম্পাসে অ-রাজনৈতিক ২৮টি সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে। অ্যাকাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি ছোট ক্যাম্পাসে সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তারা নিজেদের গড়ে তুলতে সংগঠনগুলো করা হয়েছে। এর ফলে পরবর্তীতে ক্যারিয়ারে প্রবেশের সময় যোগ্যতা অনুযায়ী ঠাঁই করে নিচ্ছে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজ। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো এবারও সেরা মুকুটটা ধরে রেখেছে পদ্মা পাড়ে গড়ে ওঠা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমান বলেন, আগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা মনোবেদনা, মর্মব্যথা ছিল। তাদের মনে হতো রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়ে জীবনটা শেষ হয়ে গেল। এই মনমানসিকতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে দূর করা গেছে। তাদেরকে বলা হয়েছে, শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি তোমাদের যা যা লাগবে কলেজ প্রশাসন থেকে সবরকম সহযোগিতা করা হবে। ছোট ক্যাম্পাসটাকে তোমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রকম সুযোগ সুবিধা পাবে। সেভাবেই হীনমান্যতা দূর করে তোমাদেরকে যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। শিক্ষার্থীরা গড়ে তুলে এই প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়ভাবে তুলে ধরছে। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা গড় দূরুত্ব ছিল। সে দূরুত্বটা কমে গেছে। এসব ক্ষেত্রে শিক্ষকরা খুবই নিবেদিত। রেজাল্টও অন্যান্য কলেজের চেয়েও ভালো হচ্ছে। আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেও এবার প্রথম হয়েছি। অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান বলেন, ‘পড়ালেখার জন্য সেমিনার, লাইব্রেরির সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কলেজের ৩০ জন ছেলেমেয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এরমধ্যে দুইজন ভর্তি হতে আর্থিক অসুবিধা মুখে পড়েছিল। তাদেরকে আমরা অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছি। যাতে করে কলেজ ক্যাম্পাস শেষ হলেও আমাদের সাথে শিক্ষার্থীদের একটা আন্তরিক সম্পর্ক থাকে।’ হবিবুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহী নগরীতে আইটি ভিলেজ গড়ে উঠছে। এখানে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে প্রবেশ করানো জন্য কলেজ প্রশাসন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রত্যেক দিন বিকেল ৪ থেকে ৫টা এবং ৫ টা থেকে ৬টা পর্যন্ত আইসিটি সেন্টারে ১১০ জন ছেলে মেয়েদের নিয়ে ব্যাচ করে কম্পিউটার বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বর্তমানে দশম ব্যাচ চলছে বলে জানান তিনি।’ অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমান আরও বলেন, দেশের অনেক কলেজে ভালো ল্যাব আছে। কিন্তু তা ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু প্রথম থেকেই আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবগত করা আছে। শ্রেণিকক্ষের পাঠ শেষ করে ব্যবহারিক ক্লাসে শতভাগ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এক সময় রাজশাহী কলেজে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি লেগে থাকতো। কিন্তু বর্তমানে কলেজ প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক তেমন প্রভাব বিস্তার নেই। এজন্য স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বড় ভূমিকা রয়েছে। তারা কলেজের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার জন্য কলেজ প্রশাসনকে সবরকম সহযোগিতা করে থাকেন বলে জানালেন কলেজ অধ্যক্ষ।’ অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমান আরও বলেন, জাতির আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থেকে প্রতিষ্ঠানটি নিজেই হয়ে উঠেছে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশের অনেক মনীষী, পণ্ডিত ও কৃত্যবিদ্য শিক্ষক যেমন প্রতিষ্ঠানটি আলোকিত করেছেন, ঠিক তেমনি এখানকার শিক্ষার্থীদের অনেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রেখেছেন কৃতির স্বাক্ষর। প্রতিষ্ঠানটি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের প্রতিটি গৌরবময় অধ্যায়ের গর্বিত অংশীদার। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও রাজশাহী কলেজ তার গৌরবের উত্তরাধিকার বহন করে চলছে। মেধাবী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমাহারে কলেজ পর্যায়ে এখনও দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। গৌরময় ঐতিহ্যের ধারায় শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে কলেজটি নিরলসভাবে কাজ করে চলছে। কলেজের সমস্যার ব্যাপারে অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমান বলেন, নতুন করে কলেজ ক্যাম্পাসে ১০তলা একাডেমি ভবন নির্মাণ করা হবে। তখন আমাদের শ্রেণিকক্ষের সমস্যা তেমন থাকবে না। এছাড়া শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। ধীরে ধীরে কলেজটাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেন এই অধ্যক্ষ।