প্লাস্টিকের জার ধরে সাঁতরে বাংলাদেশে ১১ রোহিঙ্গা
প্লাস্টিকের জার ধরে মিয়ানমার থেকে নাফ নদী সাঁতরে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন ১১ রোহিঙ্গা।
রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন এখনও চলছে বলে জানান তারা।
কোস্টগার্ডের শাহপরীর দ্বীপ স্টেশনের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জাফর ইমাম সজীব জানান, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় শাহপরীর দ্বীপ থেকে ১১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেন।
তিনি বলেন, এ ১১ রোহিঙ্গারা জারে ভর দিয়ে নাফ নদী সাঁতরে এসেছেন তারা মিয়ানমার দিক থেকে এসে শূন্যরেখা অতিক্রম করে বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে পড়েন। কোস্টগার্ড সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে কূলে নিয়ে আসেন।
এই রোহিঙ্গাদের সবাই মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু শহরের আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। সাঁতরে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটের যে অংশে তারা উঠেছেন, সেখানে নাফ নদী প্রায় তিন কিলোমিটার চওড়া।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জাফর বলেন, মিয়ানমারে এখনও রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। বুধবার সকালেও সেদেশের সেনাবাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট লোকজন মংডু শহরের আশপাশের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোয় সহিংসতা চালিয়েছে বলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন।
তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা বেশির ভাগই তরুণ, দুই-তিনজন কিশোরও তাদের মধ্যে রয়েছে।
বিজিবি এসব রোহিঙ্গাকে বালুখালী ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রাণ বাঁচাতে নতুন করে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’বলে বর্ণনা করেছে।
এদিকে, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ১০ হাজার টয়লেট নির্মাণ করে দেবে ইউনিসেফ। এ লক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইউনিসেফ।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হাবিবুল কবীর এবং সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এসময় ত্রান মন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া জানিয়েছেন, যে সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে তাদের জন্য ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টয়টেল প্রয়োজন। এরইমধ্যে সরকার প্রায় আট হাজার নির্মাণ করে দিয়েছে। দশ হাজার নির্মাণ করবে ইউনিসেফ। আর এরজন্য ১১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় করবে সংস্থাটি। বাকি টয়লেট বিভিন্ন সংস্থার সাহায্যে নির্মাণ করার কথা জানান মন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায়, রোহিঙ্গাদের সব ধরনের সহায়তা ব্যবস্থাপনা করছে তার মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্রে রোহিঙ্গা শিশুদের কলেরা টিকা খাওয়ানোর কার্যক্রম চলছে পুরোদমে।
বুধবার সকালে প্রথম রাউন্ডের দ্বিতীয় দিনের মতো এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এক বছর বয়সের বেশি সব রোহিঙ্গা শিশুকে টিকা খাওয়ানো হচ্ছে। আর ৩১ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় রাউন্ডে ১ থেকে ৫ বছর বয়সী প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা শিশুকে খাওয়ানো হবে কলেরার টিকা।
প্রথম রাউন্ডে টিকা খাওয়ানো রোহিঙ্গা শিশুদের দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করা হবে এই রাউন্ডেই। আর কয়েক রাউন্ডে প্রায় ১০ লাখ ডোজ টিকা শিশুসহ সব বয়সীদের খাওয়ানো হবে।
গত ২৪ অগাস্ট রাতে বিদ্রোহী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাক্যাম্পে হামলা চালানোর পর রাজ্যের পূর্বাঞ্চলের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলোয় অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।