“অন্ধকারাচ্ছন্ন শ্রীপুরের মাওনা ফ্লাইওভার ঘিরে বাড়ছে অপরাধ”
টি.আই সানি,শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
যানজট নিরসন, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সহজতর যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর স্থাপিত ‘মাওনা ফ্লাইওভার।’প্রায় আড়াই বছর আগে উদ্বোধন করা হয় গাজীপুরের শ্রীপুর মাওনা ফ্লাইওভারটি। ফ্লাইওভারের উপরে লাগানো লাইট পোস্টের অধিকাংশ লাইট না জ্বালানোর ফলে রাতে এক ভুতুরে পরিবেশের মধ্যে মাদকাসক্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ হত্যা করে এর উপর লাশ ফেলে রাখার মতো ঘটনাও ঘটছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. শিহাব খান বলেন, ফ্লাইওভারের দুই লেনের মাঝে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে লাইট পোস্টগুলো। লাইট পোস্টে বাতি লাগানো আছে। কিন্তু প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ফ্লাইওভারটিতে রাতে বাতি বন্ধ থাকে। তাই ব্যস্ততম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর নির্মিত মাওনা ফ্লাইওভারে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে নেমে আসে এক ভুতুড়ে পরিবেশ। হাঁটতে গেলেও ভয়ে গা ছমছম করে উঠে। আর এ পরিবেশের মধ্যে উপরে উঠলে প্রায় সময়ই ছিনতাইয়ের ঘটছে, ব্রিজের উপর বসে মাদকসেবীদের আড্ডাও। অন্ধকারাচ্ছন্ন, ভীতিকর পরিবেশে শুনসান নীরবতায় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মাদকসেবীদের মাদক সেবনের নির্ভরযোগ্য জায়গা তথা অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে ব্রিজটি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে খুন করে সেখানে লাশও ফেলে রাখার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
ফ্লাইওভারের নিচের অংশজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের শুভেচ্ছা সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন। এই ব্যানার ফেস্টুন সাঁটানোর ফলে ফ্লাইওভার তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। তা প্রতিনিয়ত প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন।
বৈদ্যুতিক লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে দুই দিন আগে তীব্র গরমে হাওয়া খেতে অন্ধকার ফ্লাইওভারের উপর উঠতে সাহস পাচ্ছিলেন না আইনজীবী আশরাফুল ইসলাম রতন,বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণের পর বাতিগুলো
একসাথে জ্বললে ফ্লাইওভারের আশপাশ রাতের বেলা জ্বলজ্বল করতো। তা দেখতেও বেশ দারুণ দেখাতো। কিন্তু হঠাৎই লাইটগুলো জ্বলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন ফ্লাইওভারের উপরে রাতের বেলা সৃষ্টি হয় এক ভীতিকর পরিবেশের।
২০১৬ সালের ২৫ মে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর আলমের ব্যবহৃত প্রাডো জিপ গাড়ি লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি চালায়। এ ঘটনায় চালক আকরাম হোসেন বাদী হয়ে পরদিন শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। একই বছরের ১২ আগস্ট পৌর এলাকার মাওনা চৌরাস্তায় একটি স্বর্ণের দোকানে বোমা ফাটিয়ে ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে। এসময় ফ্লাইওভারের উপর থেকে দোকান লক্ষ্য করে বোমার নিক্ষেপ করা হয়।
২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর সোমবার দিবাগত রাতে মাওনা হাইওয়ে পুলিশ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা ফ্লাইওভারের ওপর থেকে অজ্ঞাত যুবক (৩০) এর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। লাশের ওপর দিয়ে একের পর এক যানবাহন চলাচল করায় লাশটি ছিন্ন ভিন্ন হয়ে রাস্তার সাথে মিশে যায়। পরে পুলিশ রাতে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। তবে পুলিশের ধারণা, অন্য কোথাও থেকে লাশ গাড়িতে করে এনে রাতের অন্ধকারাচ্ছন্ন ফ্লাইওভারের ওপর ফেলে চলে গেছে।
চলতি বছর ১৯ আগস্ট ফ্লাইওভারের উপর থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের অপর একটি লাশ উদ্ধার করে মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশ।
মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ফ্লাইওভারটির অর্ধেক বাতি জ্বলে অর্ধেক জ্বলে না। বিষয়টি গাজীপুরের সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায়ও একাধিকবার অবহিত করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আক্তার জানান, বিষয়টি আগে কেউ আমাকে অবগত করেননি। গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিন রেজা বলেন, বিষয়টি আমার ধারণায় নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। লাইট না জ্বলে থাকলে লাইট জ্বালানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।