নীলফামারী-৩ সংসদীয় আসনে বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া
শাহ মো: জিয়াউর রহমান,নীলফামারী :
নীলফামারী -৩ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে চলছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। দলীয় মনোনয়ন নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। আবার অন্য দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলের বাইরে থেকে মাঠ গোছাতে সকল ইউনিয়নে উঠান বৈঠক সভা সেমিনারসহ বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নীলফামারী-৩ আসনটি নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলা এবং কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা,পুটিমারী ও রনচন্ডি ইউনিয়ন গঠিত।
একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের নেতারা মনোনয়নের প্রত্যাশায় কাজ করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে হাফ ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে।
এতে দলের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে । অন্যদিকে জামায়াত থেকে একজন, জাতীয় পার্টি থেকে তিন জন , বিএনপি থেকে এক জন ও স্বতন্ত্র থেকে এক জনের নাম শোনা যাচ্ছে।
জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত এ আসনটি এবার বিএনপি দাবি করতে পারে । তবে, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সংগঠন বিএনপির কাছে থেকে যে ৬০টি আসনের দাবি করেছে তারমধ্যে এ আসনটি করেছে । তবে জোট ছাড়াও একক নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে সব দলেরই।
এ আসনটিতে বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিগত রমজান মাস ও ঈদ পরবর্তীতে নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে প্রার্থীরা নিজেদের যোগ্যতা তুলে ধরছেন ।
এ আসনে হয়ে যাওয়া ১০টি নির্বাচনের বেশির ভাগই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত ও মুসলিম লীগের প্রার্থী। সারা দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের যে কয়েকটি শক্ত অবস্থান রয়েছে, এর মধ্যে নীলফামারী-৩ আসন অন্যতম।
আগের নির্বাচনগুলোর ফল অনুযায়ী, এককভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী প্রথম, পঞ্চম ও দশম নির্বাচনে জয়ী হন। নবম সংসদে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী।
চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি, ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়। স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগ দ্বিতীয়, জামায়াত তৃতীয়, সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আসনটি দখল করে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী যাঁরা ঃ বর্তমান সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম মোস্তফা (বর্তমান সংসদ সদস্য), জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টু, উপজেলার গোলনা ইউনিয়ন পরিষদের দ’ুবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান কামরুল আলম কবির ও উনসত্তরের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা এ কে এম শহীদুল ইসলাম মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে।
জামায়াত ঃ আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন চুড়ান্ত করেছেন জামায়াত। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল ইসলামের প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা । দায়িত্বশীল নেতারা জানায়, ২০০৮ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে নির্বাচন করেছিলেন জামায়াতের এই নেতা। এবারের নির্বাচনেও জোটের মনোনয়নে তিনিই প্রার্থী হবেন। সুষ্ঠ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হলে জামায়াত তার হারান মসনদ ফিরে পাবেন বলে মনে করেন দায়িত্বশীল নেতারা ।
জাতীয় পার্টি ঃ এ আসনটিতে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির কাজী ফারূক কাদের।
গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এবারও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি। কাজী ফারূক কাদের মুসলিম লীগ নেতা কাজী আব্দুল কাদেরের ছেলে।
মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব সাজ্জাদ পারভেজ ।
সুত্র মোতাবেক জানা গেছে, জাতীয় পার্টি থেকে মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল নামের আরেকজন মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ।
বিএনপি ঃ এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় বিএনপির সহঃ সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) শিল্পপতি মোঃ সামসুজ্জামান জামান। তিনি নীলফামারী- ৩ (জলঢাকা -কিশোরগঞ্জ আংশিক) অথবা নীলফামারী-২ ( নীলফামারী সদর) যে কোন একটিতে প্রার্থী হতে চান ।
স্বতন্ত্র : জামায়াতের সমর্থন নিয়ে দু’বারের নির্বাচিত জলঢাকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিল্পপতি সৈয়দ আলী এবার জামায়াতের বাইরে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মাঠে রয়েছেন।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী একাদশ নির্বাচনের জন্য সকল প্রার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে। আর সে পর্যন্ত কে হচ্ছেন কোন দলের প্রার্থী তা দেখার অপেক্ষায় আছে নীলফামারী-৩ আসনের দলীয় নেতা কর্মীরা। এ জেলার সকল তথ্য জানতে চোখ রাখুন“ নতুন সময় টিভি ”তে।