খুলনা-কলকাতা রুটে সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস ১৬ নভেম্বর চালু হবে”
শহিদুল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধি।। আগামী ১৬ নভেম্বর খুলনা-কলকাতা রুটে সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস চালু হবে।
‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ নামে এ ট্রেনটি খুলনা থেকে কলকাতা পৌনে দুশ’ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দিতে সময় নেবে পাঁচ ঘণ্টা। উভয় দেশের প্রান্তিক স্টেশন কলকাতার চিৎপুর আর খুলনায় সম্পন্ন হবে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা।
সকাল সাড়ে সাতটায় কলকাতার চিৎপুর থেকে যাত্রী নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় ‘বন্ধন’ পৌঁছুবে খুলনায়। এরপর দুপুর দেড়টায় খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ ফের কলকাতায় পৌঁছে যাবে।
প্রাথমিক প্রস্তাবে চেয়ার কোচে আট ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৫০ টাকা) এবং কেবিনে ১২ ডলার (প্রায় ৯৫০ টাকা) সিট ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, চলতি অক্টোবরের ২৪ ও ২৫ তারিখ দিল্লিতে উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের রেল কর্মকর্তাদের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
ওই বৈঠকে অংশ নিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল নয়া দিল্লি যাবে। ভারতের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বসে ভাড়া চূড়ান্ত করবেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে ভাড়া নির্ধারণে উভয় দেশের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়। নয়াদিল্লি রেলভবনে গত ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিন দিনব্যাপী ভারত-বাংলাদেশের রেল কর্মকর্তাদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে তিন দফায় দিনক্ষণ নির্ধারণ করেও খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী রেল চলাচল শুরু করা যায়নি। প্রথম দফায় গত পয়লা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) এ ট্রেন চালুর কথা ছিল। কিন্তু ওই তারিখে ট্রেন চালু করা সম্ভব হয়নি। এরপর দ্বিতীয় দফায় পয়লা জুলাই ও তৃতীয় দফায় ৩ আগস্ট ট্রেনটি চালুর উদ্যোগ নিলেও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি।
ঢাকা-কলকাতার পর খুলনা-কলকাতা রুটে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিতীয় মৈত্রী ট্রেনটির নামকরণের প্রস্তাব করা হয়েছিল ‘সোনারতরী’। কিন্তু উভয় দেশের রেলে একই নাম ব্যবহৃত হওয়ায় তা বাদ দেওয়া হয়। এরপর প্রস্তাব দেওয়া হয় ‘সম্প্রীতি’ ও ‘বন্ধন’। পরে ‘বন্ধন’ নামটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
খুলনা-কলকাতা রেল চলাচল নিয়ে গত ৫২ বছর ধরে আশায় ছিলেন দুই বাংলার মানুষ। ব্রিটিশ শাসনামলে চালু হওয়া পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে খুলনা কলকাতা যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করতো। বরিশাল থেকে যাত্রীরা স্টিমার ও রেলের টিকিট এক সঙ্গে কেটে খুলনায় স্টিমার থেকে নেমে ট্রেনে উঠতেন। নামতেন শিয়ালদহ স্টেশনে। ইমিগ্রেশন-কাস্টমস সম্পন্ন হতো রেলের কামরার মধ্যেই। সীমান্তে কোনো বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হতো না। এছাড়া ট্রেন চলাচল করতো ফরিদপুরের গোয়ালন্দ-কলকাতা রুটেও। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে বন্ধ হয়ে যায় সব রেল চলাচল।
অবশ্য দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৮ সালের পয়লা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) থেকে ঢাকা-কলকাতা রুটে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ চালু করা হয়। দুই দেশের রেলওয়েই এই সার্ভিসে লাভবান হচ্ছে। যাত্রীরাও রেল পরিষেবা পাচ্ছেন।