কালীগঞ্জে দু’জনের নামে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে থানায় মামলা
শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দুই ফেসবুক আইডি ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে ওই উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের হরবানীনগর এলাকার আবুল কালাম আজাদের ছেলে কামরুজ্জামান রাজু (২৮) বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহার ভূক্ত আসামীরা হলেন, কাকিনা ইউনিয়নের হরবানীনগর চওড়াটারী এলাকার চিত্ত রঞ্জন রায়ের ছেলে শ্যামল চন্দ্র রায় শিমুল (২৪) ও অজ্ঞাত ঠিকানাধারী মহম্মদ সাফেক উদ্দিন।
এলাকাবাসী ও মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাতে কালীগঞ্জের শান্তিগঞ্জ বাজার এলাকার জনৈক এমদাদুল হক মিলন নামে এক ব্যক্তির ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশের দোকানে বসে ছিলেন হরবানীনগর এলাকার আবুল কালাম ছেলে কামরুজ্জামান রাজু। এমন সময় স্থানীয় শ্যামল কুমার রায় শিমুলের ফেসবুক আইডিতে কাবা শরীফের একটি ছবি ও কিছু লেখা পোষ্ট দেখতে পান।
এতে মুসলমানদের ধর্মী চরম আঘাত করে আজেবাজে বিষয় দেখতে পান। ছবির বিবরণ ও পোষ্টের বিষয় পত্রিকায় ছাপার অযোগ্য। এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ প্রকাশ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসুল্লিরা দলে দলে মিছিলসহকারে শান্তিগঞ্জ বাজারে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে কয়েক হাজার মানুষের সমাগমে উত্তাল হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার ও কালীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।
পরে মামলা ও আসামী গ্রেফতারের আশ্বাসে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি ঘটলেও এখনও থমথমে বিরাজ করছে। তবে ঘটনাস্থলে সাদা ও পোষাকধারী অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায় শান্তিগঞ্জ বাজারে অশান্তির বাতাস। তবে সনাতন ধর্মালম্বীদের পরিবারের বাড়ী গুলোতে পুলিশের আইন-শৃঙ্খলা টহল জোরদার করা হয়েছে। অপর দিকে শ্যামল কুমার রায় শিমুলের পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে থাকায় বাড়ীতে কাউকেই পাওয়া যায়নি। তবে শান্তিগঞ্জ বাজারে ঔষধ বিক্রেতা শ্যামলের জ্যাঠ্যা মনোরঞ্জন চন্দ্র রায়কে বাড়ীতে পাওয়া যায়। পড়াশুনার পাশাপাশি শ্যামল কুমার রায় শিমুল ওই দোকান পরিচালনা করতেন। শ্যামল স্থানীয় উত্তরবাংলা কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
শ্যামল কুমার রায় শিমুল নামে ফেসবুক আইডিতে অপর মহম্মদ সাফেক উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট করা একটি ছবি ও লেখা শ্যামল নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করেন। ধর্মীয় আঘাত করার মতো এই ছবি ও পোষ্ট শেয়ার করার কারণে স্থানীয় মুসুল্লীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আন্দোলনে শুরু করেন। এ ঘটনার পর থেকে শ্যামল চন্দ্র রায় এবং তার পরিবার পলাতক রয়েছে।
মামলার বাদী কামরুজ্জামান রাজু বলেন, ‘বিষয়টি ধর্মীয় স্বার্থে আমি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছি। আসামীকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত মুসুল্লিদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
কালীগঞ্জ থানার ওসি মকবুল হোসেন মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বুধবার দিবাগত রাতে কালীগঞ্জের শান্তিগঞ্জ বাজার এলাকায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনায় স্থানীয় জনসাধারণের আন্দোলন-বিক্ষোভ জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক মহোদয়ের আশ্বাসে এক পর্যায়ে পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নেয়। ফেসবুকে কাবা শরীফ, আল্লাহ ও নবীকে (সাঃ) অবমাননা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে শ্যামল কুমার রায় শিমুল ও অজ্ঞাত পরিচয়ের মহম্মদ সাফেক উদ্দিন নামে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) তৎসহ ২৯৫(ক) পেনাল কোর্ডে মামলা করা হয়েছে। আসামী গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শান্তিগঞ্জ বাজারসহ কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পুলিশের প্রত্যেকটি মোবাইল দলকে সমন্বয় করছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এনএম নাসিরুদ্দিন। আসামীকে গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’