মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মঠগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে
রুবেল মাদবর মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
মুন্সীগঞ্জের প্রাচীন নাম বিক্রমপুর। প্রাচীনকাল থেকে এ জেলার ঐতিহ্য বহন করে আসছে অসংখ্য মঠ। ছোট-বড় মিলিয়ে এ জেলায় মোট ২৬টি মঠ রয়েছে। হারিয়েও গিয়েছে বেশ কয়েটি।শত শত বছর ধরে এসব মঠগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব মঠ সংস্কার না করায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জেলার স্বল্প কিছু মঠ নিজেদের অধীনে নিলেও বেশিরভাগ মঠই অবহেলায় অযন্তে পড়ে রয়েছে।এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মঠগুলো মুন্সীগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে। অতীশ দিপংকর, নাটেশ্বর, রঘুরামপুর, বজ্রযোগিনীতে সংস্কার কাজ চলছে। এগুলোর সঙ্গে যে মঠগুলো ইতিহাসে সুপরিচিতি তা সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরী। এতে এই অঞ্চলটি বিশাল পর্যটননগরী হিসেবে পরিচিত লাভ করবে।অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূহ আলম লেলিন বলেন, বিক্রমপুরের মঠগুলো আমাদের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। জেলাতে যেসব মঠ আছে সেগুলো সংস্কার না করলে কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে যাবে।সরকারি হরগংগা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বিক্রমপুর গবেষক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় মঠ হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের শ্যামসিদ্ধির মঠ। ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত কুতুব মিনারের উচ্চতা ২৩৬ ফুট আর শ্যামসিদ্ধির মঠটির উচ্চতা ২৪১ ফুট। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর যদি পুরানো ঐতিহ্য বজায় রেখে এ মঠটির সংস্কার করে তাহলে এ ঐতিহ্য বজায় থাকবে। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ মঠের পাদদেশে টাইলসস্থাপন করায় মঠের ঐতিহ্য নষ্ট হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিয়ম না মেনে সংস্কার করায় আমাদের ঐতিহ্যের ওপর অবহেলা করা হয়েছে।প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরেরে উপ-পরিচালক (প্রশাসন) গাজী মো. ওয়ালি-উল-হক বলেন, বর্তমানে অধিদপ্তরের আওতায় ৪৫৫টি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি রয়েছে সারা বাংলাদশে। মুন্সীগঞ্জ জেলাতে যেসব মঠ রয়েছে সেগুলো আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেব। যদি এসব মঠ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নীতিমালায় পড়ে তাহলে শিগ্রই আমরা মঠগুলো রক্ষার্থে কাজ শুরু করবো।সোনারং জোড়া মঠ বাংলাদেশের অষ্টাদশ শতাব্দীর এই প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। এটি জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ২৪১ ফুট উঁচু এই মঠ দিল্লীর কুতুব মিনারের চেয়েও পাঁচ ফুট উঁচু। তাই এটি ভারত উপমহাদেশের সর্বোচ্চ মঠ। এছাড়া মন্দিরের সামনের অংশে বেশ বড় আকারের একটি পুকুর রয়েছে। মন্দিরটি তৈরির সময়ে এই পুকুরটি তৈরি করা হয়।সোনারং গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা রতন বিশ্বাস বলেন, সোনারং জোড়া মন্দির থেকে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। মন্দিরটির নিচের দিক থেকে সামান্য উঁচুতেই কারুকাজের মধ্যে তামার নানা নকশা ছিল এবং এই নকশার সঙ্গেধাতব বস্তুর নকশাও ছিল। মন্দিরের ভেতরেও ছিল পাথরের মূর্তি। সেগুলো চুরি হয়ে গেছে। এছাড়া মন্দিরের শিখরের ত্রিশুলটিও চুরির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।এদিকে, শ্রীনগর উপজেলার শ্যামসিদ্ধি গ্রামে অবস্থিত শ্যামসিদ্ধির মঠ। আনুমানিক ২৪৭ বছরের পুরনো এই মঠটি ভারতউপমহাদেশের সর্বোচ্চ স্মৃতিস্তম্ভ বলে বিবেচিত। ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত কুতুব মিনারের উচ্চতা ২৩৬ ফুট। আর শ্যামসিদ্ধির এই মঠটির উচ্চতা ২৪১ ফুট। তবে কুতুব মিনারের মত এটি সংরক্ষিত নয়, শ্যামসিদ্ধির মঠের এখন কেবলধ্বংসাবশেষই অবশিষ্ট রয়েছে।সিরাজদিখান উপজেলার তাজপুর গ্রামে পাশাপাশি তিনটি মঠ দাঁড়িয়ে আছে যা তাজপুর মঠ নামে পরিচিত। বাংলা ১৩০৫ সনে শ্রী রমেন্দ্র চন্দ্র সেনের স্মৃতি রক্ষার্থে মঠ তিনটি নির্মাণ করা হয়।রামপাল ইউনিয়নের কালীর আটপাড়া এলাকায় মুন্সীগঞ্জ-টংগীবাড়ি রাস্তার পাশে একটি পঞ্চচূড়ার মন্দির দেখা যায় যা কালির আটপাড়া মঠ। মঠটির বয়স অনুমানিক ১০০ বছর। সদর উপজেলার মহাকালি ইউনিয়ন পরিষদের পূর্ব দিকে মঠটি অবস্থিত।শ্রীনগরের মাইজপাড়া মঠটি মাইজপাড়া রায় বাড়ির মঠ নামে পরিচিত। ইংরেজি ২০১৪ সালে মঠের উপরের অংশটি সংস্কারের অভাবে ভেঙে যায়। বর্তমানে মধ্যাংশ ভেঙে রয়েছে। কেয়টখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় কেয়টখালি মঠটি অবস্থিত। এর আনুমানিক বয়স ১৫০ বছর।জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, মুন্সীগঞ্জে যে মঠগুলো রয়েছে তা সংস্কার করে এর পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে নিদর্শনগুলোকে সংস্কার করার জন্য জানানো হবে। এছাড়া প্রশাসন থেকে মঠগুলো রক্ষার্থে সবাইকে সচেতন করা হবে।
মুন্সীগঞ্জের প্রাচীন নাম বিক্রমপুর। প্রাচীনকাল থেকে এ জেলার ঐতিহ্য বহন করে আসছে অসংখ্য মঠ। ছোট-বড় মিলিয়ে এ জেলায় মোট ২৬টি মঠ রয়েছে। হারিয়েও গিয়েছে বেশ কয়েটি।শত শত বছর ধরে এসব মঠগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব মঠ সংস্কার না করায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জেলার স্বল্প কিছু মঠ নিজেদের অধীনে নিলেও বেশিরভাগ মঠই অবহেলায় অযন্তে পড়ে রয়েছে।এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মঠগুলো মুন্সীগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে। অতীশ দিপংকর, নাটেশ্বর, রঘুরামপুর, বজ্রযোগিনীতে সংস্কার কাজ চলছে। এগুলোর সঙ্গে যে মঠগুলো ইতিহাসে সুপরিচিতি তা সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরী। এতে এই অঞ্চলটি বিশাল পর্যটননগরী হিসেবে পরিচিত লাভ করবে।অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূহ আলম লেলিন বলেন, বিক্রমপুরের মঠগুলো আমাদের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। জেলাতে যেসব মঠ আছে সেগুলো সংস্কার না করলে কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে যাবে।সরকারি হরগংগা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বিক্রমপুর গবেষক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় মঠ হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের শ্যামসিদ্ধির মঠ। ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত কুতুব মিনারের উচ্চতা ২৩৬ ফুট আর শ্যামসিদ্ধির মঠটির উচ্চতা ২৪১ ফুট। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর যদি পুরানো ঐতিহ্য বজায় রেখে এ মঠটির সংস্কার করে তাহলে এ ঐতিহ্য বজায় থাকবে। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ মঠের পাদদেশে টাইলসস্থাপন করায় মঠের ঐতিহ্য নষ্ট হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিয়ম না মেনে সংস্কার করায় আমাদের ঐতিহ্যের ওপর অবহেলা করা হয়েছে।প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরেরে উপ-পরিচালক (প্রশাসন) গাজী মো. ওয়ালি-উল-হক বলেন, বর্তমানে অধিদপ্তরের আওতায় ৪৫৫টি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি রয়েছে সারা বাংলাদশে। মুন্সীগঞ্জ জেলাতে যেসব মঠ রয়েছে সেগুলো আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেব। যদি এসব মঠ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নীতিমালায় পড়ে তাহলে শিগ্রই আমরা মঠগুলো রক্ষার্থে কাজ শুরু করবো।সোনারং জোড়া মঠ বাংলাদেশের অষ্টাদশ শতাব্দীর এই প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। এটি জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ২৪১ ফুট উঁচু এই মঠ দিল্লীর কুতুব মিনারের চেয়েও পাঁচ ফুট উঁচু। তাই এটি ভারত উপমহাদেশের সর্বোচ্চ মঠ। এছাড়া মন্দিরের সামনের অংশে বেশ বড় আকারের একটি পুকুর রয়েছে। মন্দিরটি তৈরির সময়ে এই পুকুরটি তৈরি করা হয়।সোনারং গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা রতন বিশ্বাস বলেন, সোনারং জোড়া মন্দির থেকে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। মন্দিরটির নিচের দিক থেকে সামান্য উঁচুতেই কারুকাজের মধ্যে তামার নানা নকশা ছিল এবং এই নকশার সঙ্গেধাতব বস্তুর নকশাও ছিল। মন্দিরের ভেতরেও ছিল পাথরের মূর্তি। সেগুলো চুরি হয়ে গেছে। এছাড়া মন্দিরের শিখরের ত্রিশুলটিও চুরির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।এদিকে, শ্রীনগর উপজেলার শ্যামসিদ্ধি গ্রামে অবস্থিত শ্যামসিদ্ধির মঠ। আনুমানিক ২৪৭ বছরের পুরনো এই মঠটি ভারতউপমহাদেশের সর্বোচ্চ স্মৃতিস্তম্ভ বলে বিবেচিত। ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত কুতুব মিনারের উচ্চতা ২৩৬ ফুট। আর শ্যামসিদ্ধির এই মঠটির উচ্চতা ২৪১ ফুট। তবে কুতুব মিনারের মত এটি সংরক্ষিত নয়, শ্যামসিদ্ধির মঠের এখন কেবলধ্বংসাবশেষই অবশিষ্ট রয়েছে।সিরাজদিখান উপজেলার তাজপুর গ্রামে পাশাপাশি তিনটি মঠ দাঁড়িয়ে আছে যা তাজপুর মঠ নামে পরিচিত। বাংলা ১৩০৫ সনে শ্রী রমেন্দ্র চন্দ্র সেনের স্মৃতি রক্ষার্থে মঠ তিনটি নির্মাণ করা হয়।রামপাল ইউনিয়নের কালীর আটপাড়া এলাকায় মুন্সীগঞ্জ-টংগীবাড়ি রাস্তার পাশে একটি পঞ্চচূড়ার মন্দির দেখা যায় যা কালির আটপাড়া মঠ। মঠটির বয়স অনুমানিক ১০০ বছর। সদর উপজেলার মহাকালি ইউনিয়ন পরিষদের পূর্ব দিকে মঠটি অবস্থিত।শ্রীনগরের মাইজপাড়া মঠটি মাইজপাড়া রায় বাড়ির মঠ নামে পরিচিত। ইংরেজি ২০১৪ সালে মঠের উপরের অংশটি সংস্কারের অভাবে ভেঙে যায়। বর্তমানে মধ্যাংশ ভেঙে রয়েছে। কেয়টখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় কেয়টখালি মঠটি অবস্থিত। এর আনুমানিক বয়স ১৫০ বছর।জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, মুন্সীগঞ্জে যে মঠগুলো রয়েছে তা সংস্কার করে এর পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে নিদর্শনগুলোকে সংস্কার করার জন্য জানানো হবে। এছাড়া প্রশাসন থেকে মঠগুলো রক্ষার্থে সবাইকে সচেতন করা হবে।