শাহপরীর দ্বীপে বেড়িবাঁধ নির্মাণে দ্বীপবাসীর মাঝে স্বস্তি বিরাজ
চট্টগ্রাম ব্যুরো : বিশেষ প্রতিবেদন
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর শাহপরীর দ্বীপের ভাঙা বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার ১৯ অক্টোবর। এতে দ্বীপবাসীর র্দীঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ায় হাজার হাজার মানুষের মধ্যে বইছে স্বস্তির বাতাস । টেকনাফ উপজলোর শাহপরীর দ্বীপ এলাকার পোল্ডার নং ৬৮ এর সী ডাইক অংশে প্রতিরক্ষা কাজসহ টেকসই ও মজবুত বাঁধ পুনঃনির্মাণে ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ’র সনোকান্দা ডকইর্য়াড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওর্য়াকস লিমিটেড বাংলদেশ নৌ বাহিনী। সাবরাং হারিয়াখালীতে উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন পরবর্তী এমপি সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী। ভূখণ্ড রক্ষা ও মানুষের ভোগান্তি লাঘবে সরকার নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শাহপরীর দ্বী্পরে বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে। তিনি বলনে, শাহপরীর দ্বীপসহ টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করায় বেড়িবাঁধের মাটি সরে গেছে, এতে হুমকরি মুখে পড়েছে উপকূলীয় এলাকাগুলো। বর্তমান সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেকে) টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপরে জন্য ১০৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। বেড়িবাঁধ ভাঙ্গার টানা ৫ বছর ৩ মাস পর আগামী সপ্তাহে বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাঁধ পরিদর্শন করে। নির্মাণ কাজ শুরুর খবরে দ্বীপবাসীর মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে ।
স্বাধীনতার আগে শাহপরীর দ্বীপরে দৈর্ঘ্য ছিল ১৫ কিলোমিটার আর প্রস্থ ছিল ১০ কিলোমিটার । র্বতমানে তা ছোট হয়ে দৈর্ঘ্য ৩ কেিলামটিার ও প্রস্থ ২ কিলোমিটরে এসে দাঁড়িয়েছে আর এ ছোট্ট হওয়ার নেপথ্যে টানা ৪ বছরের ভোগান্তির কথা বলছেন শাহপরীর দ্বীপের মানুষ। দেশের র্সব দক্ষিণের সীমান্তের নাম ছিল শাহপরীরদ্বীপ। নামে দ্বীপ হলওে এটি টেকনাফের মূল ভূ-খন্ডের সাথে সংযুক্ত ছিল। কিন্তু এখন আর তার অস্তিত্ব নেই। ওটি বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ রূপ নিয়েছে একই সঙ্গে সাগরের আগ্রাসনের কবলে দ্বীপটি পাঁচ-চতুর্তাংশ বিলীন হয়ে একটি অংশ ঠিকে আছে কোন রকম।
শাহপরীর দ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান স্কুল শিক্ষক কলমি উল্লাহ জানান, ৪ বছর আগে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম অংশে বেড়িবাঁধের সামান্য অংশ সাগরে ঢেউতে ভেঙ্গে যায়। আর ওই ছোট্ট অংশ সংস্কার না করায় এখন দ্বীপটি মুল-ভূখন্ডের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন দ্বীপটিতে বেড়িবাঁধের অস্তত্বি পাওয়া যাবে না। জোয়ার মানেই পানি-পানিতে সয়লাব পুরো দ্বীপ। দ্বীপের গ্রাম সংখ্যা ছিল ১৩ টি তা এখন দাড়ায় ১০টি গ্রামে ৩টি গ্রাম সাগরে তলিয়ে যায় বাকি ১০ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ থাকেন পানি বন্দি। অথচ এ শাহপরীরদ্বীপে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ছিল। এখন ওই সড়কটি জোয়ারের সময় দেখা যাবে না। ভাটা হলে জরার্জীণ সড়কের দেখা মিলে। শাহপরীর দ্বীপের ঐতিহ্য ও আয় সর্ম্পকে এ প্রবীণ শক্ষিক জানান, লবণ, চিংড়ির জন্য আলোচিত এ দ্বীপে এখন আর নেই কোন চিংড়ি ঘের। লবণের মাঠ মানে তো সমুদ্র। মোহাম্মদ আলম নামের এক ব্যবসায়ী জানান, ‘এখন জোয়ারের সময় ছোট্ট বোট, ডিঙ্গি নৌকায় টেকনাফের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। আর ভাটা মানে ৩ কিলোমিটার কাদা ও জরার্জীণ সড়কে পায়ে হাঁটার ভোগান্তি’। এলাকার মাঝি আব্দুর রহমানের হিসেব মতে গত ৬ মাসে তিনটি শিশুকে হাসপাতালে নিতে গিয়ে কাদা ও জরার্জীণ সড়কটি অতিক্রম করতে পারেনি, মৃত সন্তান নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছে পিতা-মাতাকে ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকনাফের দায়ত্বরত প্রকৌশলী জানান, টেকনাফের ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের জন্য ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। ২০১২ সালর ২২ জুলাই বঙ্গোপসাগরের জোয়ারে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া বেড়িবাঁধের একাংশ বিলিন হয়। এটি রোধে কোন উদ্যোগ না নেয়ায় বাঁধের ভাঙন চরম আকার ধারণ করে।ফলে ঘর-বাড়ি রাস্তা-ঘাটসহ দ্বীপের বিস্তির্ণ জনপদ ধ্বংস্ব স্তুপে পরিণত হয়। ঐ এলাকায় স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ৪০ হাজার জনগোষ্ঠীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছিল। তবে সাগর ও নদীর পানির কারণে হতভাগা মানুষের আক্ষেপ ছিল আবার কি দ্বীপে বেড়িবাঁধ হবে?
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানান, ৫ বছর পর শাহপরীর দ্বীপ বাধঁ নির্মাণে ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু করায় সরকাররে প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এই বাঁধ পুনরায় নির্মাণ হলে এলাকার জীবন যাত্রার মান ও ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং দ্বীপবাসির দুঃখ ঘুচবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা ।
ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, সম্রাট শাহ সুজা তাঁর স্ত্রী পরী বানুকে নিয়ে কোন এক সময় অবস্থান নিয়েছিলেন ওই এলাকায়। এরপর শাহ সুজার ‘শাহ’ এবং পরী বানুর ‘পরী’ নিয়ে নামকরণ হয় এই দ্বীপের। আবার ভিন্নমতও রয়েছে। এতে বলা হয়েছে অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি সা’বারদি খাঁ’র ‘হানিফা ও কয়রাপরী’ কাব্য গ্রন্থের অন্যতম চরিত্র ‘শাহপরী’। রোখাম রাজ্যরে রাণী কয়রাপরীর মেয়ে শাহপরীর নামেই দ্বীপের নামকরণ হয়েছে।