নড়াইলে মানবপাচার মামলা তুলে নেয়ার জন্য ভূক্তভোগী নারীকে হুমকি
নিজেস্ব প্রতিবেদক নড়াইলের কালিয়ায় মানবপাচার মামলা তুলে নেয়ার জন্য ভূক্তভোগী নারীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলার বাদী তানজিরা বেগম জানান, কালিয়া উপজেলার পেড়লী গ্রামের ফোরকান শেখ (৪৮) এবং একই গ্রামের আলামিন ফকিরের (৩০) বিরুদ্ধে মানবপাচার মামলা তুলে নেয়ার জন্য তাকে (তানজিরা) হুমকি দেয়া হচ্ছে। ফোরকান শেখের স্ত্রী আনিরা বেগমসহ তাদের আত্মীয় রকিব মোল্যা, বক্কার ফকির ও মুন্না শেখ তানজিরার মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন। এ ঘটনায় গত ১৭ অক্টোবর হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে কালিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শীতলবাটী গ্রামের তানজিরা বেগম (৩২) বলেন, পেড়লী গ্রামের ফোরকান ও আলামিনসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র মানবপাচারকারী দলের সদস্য। তারা বিভিন্ন সময়ে কালিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিক নারীকে ভারতের বোম্বে পতিতালয়ে বিক্রি করেছে। এর মধ্যে ফোরকান শেখ তার স্ত্রী ও সন্তানদের কথা গোপন রেখে আমাকে (তানজিরা) প্রায় নয় বছর আগে বিয়ে করে। এরপর ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি আলামিনের যোগসাজসে শীতলবাটী গ্রাম থেকে বেড়ানোর কথা বলে আমাকে ভারতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভারতের বোম্বে শহরের গ্রান্ড রোডের পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়। এরপরও বিভিন্ন সময়ে ভারতের আরো কয়েকটি পতিতালয়ে আমাকে বিক্রি করে দিয়ে ফোরকান ও আলামিন সেই টাকা নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। এক পর্যায়ে ২০১৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ভারতের পোনা এলাকার একটি পতিতালয় থেকে পালিয়ে আমি (তানজিরা) বাংলাদেশে চলে আসি। গ্রামের বাড়ি শীতলবাটীতে আসার পর ফোরকান আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে এ বছরের (২০১৭) প্রথম দিকে আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে আমি বাবার বাড়িতে অবস্থান করি। আমাদের দাম্পত্য জীবনে মীম নামে সাত বছরের এক সন্তান রয়েছে। এক্ষেত্রে, ফোরকান মীমের ভরণ-পোষণও ঠিকমত দেয় না বলে অভিযোগ করেন তিনি। তানজিরা বেগম আরো বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদের পর গত ২০দিন আগে ফোরকান আমাকে আবার বিয়ে করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। গত ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার বাবার বাড়িতে এসে ফোরকান ছোরা দিয়ে আমাকে মারতে যায়। আত্মচিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসলে ফোরকান পালিয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে গত ১৪ অক্টোবর ফোরকান ও আলামিনকে আসামি করে কালিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছি। মামলার এজাহারে তানজিরা উল্লেখ করেন, ফোরকানের সাথে স্থানীয় ভাবে আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় মামলা করতে দেরি হয়েছে। তবে, মামলার পর ফোরকান ও আলামিনের আত্মীয়-স্বজন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তানজিরাকে হুমকি দিচ্ছে। তানজিরা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার মতো কোনো নারীর যেন এমন পরিস্থিতি না হয়। ফোরকান ও আলামিনের যেন উপযুক্ত বিচার হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ফোরকান ও আলামিনের আত্মীয়-স্বজন দম্ভ করে এলাকায় বলে বেড়াচ্ছেন; এ মামলায় তাদের কিছু হবে না। এ ব্যাপারে কালিয়া থানার ওসি শেখ শমসের আলী জানান, এ ঘটনায় ফোরকান শেখ ও আলামিনের নামে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ফোরকানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।