ছাতকে ইসলামপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এখন অপরাধিদের অভয়ারণ্য
চান মিয়া,, ছাতক
ছাতকে ভারতীয় সীমান্তবর্তি, সারা দেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, অত্যন্ত দূর্গম পাহাড়ি এলাকা খ্যাত ইসলামপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি এখন মাদকসেবিসহ বিভিন্ন অপরাধিদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। দীর্ঘ একযুগ বছর থেকে বন্ধ ও পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মুল ভবনটি বর্তমানে মাদক সেবন, জুয়া খেলা ও অসামজিক কর্মকান্ডের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে অপরাধিদের আসা-যাওয়া চলতে থাকে। এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি পুনঃ চালু করার দাবীতে একাধিকবার সংশি¬ষ্ট দপ্তরে আবেদন করেও কোন ফল পাচ্ছেনা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের প্রায় ১৫হাজার মানুষ সহজ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে ভৌগোলিক দিক থেকে ইসলামপুর ইউনিয়নের অবস্থান অনেকটাই জটিল। ছোট-বড় টিলা, পাহাড়ী নদী ও বালু মহালের কারনে এখানে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারেনি। অত্যন্ত নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থা কারনে সীমান্ত ঘেঁষা এ ইউনিয়নের মানুষ সরকারী অনেক সুযোগ সুবিধা থেকেই বঞ্চিত রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা জটিল হওয়ায় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর সেবাভোগী মানুষ ১৪কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উপজেলা হাসপাতালে সময়মতো এসে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করা তাদের পক্ষে অনেকটাই দুরহ। যার ফলে ঝাঁড়-ফুক ও হাতুড়ে ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হওয়া ছাড়া তাদের আর কোন গত্যান্তর থাকে না। জানা যায়ূ ভৌগোলিক জটিলাতার বিষয়টি বিবেচনা করে সীমান্তবর্তী ছনবাড়ীবাজার সংলগ্ন এলাকায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রটি চালু হয় ১৯৯০ সালে। তৎকালীন সময়ে চিকিৎসা সেবাভোগি এলাকার প্রায় ১৬হাজার মানুষের মধ্যে আসার আলো সৃষ্টি হয়। ইউনিয়নের নিজগাঁও, রতনপুর, ধনিটিলা, রাসনগর, বনগাঁও, দারোগাখালী, লুভিয়া, গাংপার-নোয়াকোট, পুরান নোয়াকোট, বৈশাকান্দি, বাহাদুরপুর গ্রামসহ কোম্পানীগঞ্জের কয়েকটি গ্রামের মানুষ চিকিৎসেবায় এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপর নির্ভশীল হয়ে উঠে। কিন্তু ভুমির মালিকানা ও মামলা সংক্রান্ত কারনে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ২০০৪ সালে বন্ধ হয়ে পড়ে। দীর্ঘ প্রায় একযুগ ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করা এলাকার সাধারণ মানুষের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়। স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত সীমান্তবর্তী এসব গ্রামের মানুষ বিকল্প ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু করার দাবীও জানিয়ে আসলেও তাদের এ আর্তনাদ কেউ আমলে নিচ্ছেন না। এদিকে গত ১৬ অক্টোবর ছনবারড়ী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রক্ষা কমিটির নামে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পুনঃ চালু বা বিকল্প ব্যবস্থায় চালু করার দাবীতে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবরে পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করে। কমিটির আহবায়ক নুরুজ্জামাল, সদস্য সচিব জাহাঙ্গির আলম রাসেল, স্থানীয় ইউপি সদস্যা হেলিমা বেগম, সদস্য লাল মিয়াসহ লোকজন জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে পড়ায় এখানে গর্ভবর্তী মা ও শিশু মৃত্যুর হার ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষ জটিল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে প্রায় ১৪ কি.মি. দুরে অবস্থিত সদর হাসপাতালে সময় মতো যেতে পারছেনা। ফলে হাতুরী ডাক্তার ও দাইমার সেবা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাদের।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র চালুর ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অভিজিৎ শর্ম্মা জানান, এ কেন্দ্রটি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রাধীন। এ ছাড়া ভবনের ভূমি নিয়ে মামলা সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। মামলার বিষয়টি নিস্পত্তি হলে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি আবারও চালু হবে। তবে বিকল্প ব্যবস্থায় চালু করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।