বেনাপোল বন্দরে অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট অচল, স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের মালামাল খালাস প্রক্রিয়া
শহিদুল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধি : দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরের অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট অকেজো হওয়ায় হঠাৎ স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের মালামাল খালাস প্রক্রিয়া। আমদানিকারকরা বন্দর থেকে সময়মতো তাদের পণ্য খালাস করতে না পারায় বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ পণ্যজট। বন্দরের গুদাম থেকে পণ্য বের করার পর নতুন পণ্য ঢোকাতে হচ্ছে। জায়গার এ সংকটের কারণে পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দরের অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে থাকছে দিনের পর দিন। ট্রাক থেকে পণ্য নামানোর অনুমতি মিললেও ক্রেন ও ফর্কলিফট বিকল থাকায় বিপাকে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। বন্দর ব্যবহারকারীদের মেশিনারিসহ ভারী মালামাল লোড-আনলোডের সময় দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থাকতে হচ্ছে সিরিয়াল দিয়ে।
বন্দরের ক্রেণ সমস্যার কারণে সোমবার সকালে বন্দরের সামনে বিক্ষোভ দেখান বন্দর ব্যবহার কারীরা। তারা হুমকি দেন আগামী রোববারের মধ্যে ক্রেণ ফর্কলিফট মেরামত না হলে তারা বন্দরের অভ্যন্তরে সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন।
বন্দরের একটি সূত্র জানায়, দেশের সিংহভাগ শিল্প-কলকারখানা, গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ ও বিভিন্ন প্রকল্পের বেশির ভাগ মেশিনারিজ আমদানি করা হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। ক্রেন ও ফর্কলিফট ছাড়া এ জাতীয় পণ্য বন্দরে আনলোড ও বন্দর থেকে খালাস নেওয়া সম্ভব নয়। মংলা বন্দর থেকে ২০০২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পর অতি পুরাতন ক্রেন ও ফর্কলিফট মংলা বন্দর থেকে ভাড়া করে এনে এখানে কাজ চালায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১০ সালের ২১ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঢাকার মহাখালীর মেসার্স এসআইএস (সীস) লজিস্টিক্যাল সিস্টেমের (জেভি) পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়। ওই বছরের ১ আগস্ট থেকে তারা বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারী কার্গো হ্যান্ডলিং এর দায়িত্ব পায়। তারা বন্দরে ৬ টি ফর্কলিফট ও ৫টি ক্রেণ দিয়ে মালামাল ওঠানামার কাজ করার পর ওই বছরের ১০ নভেম্বর আরো ৬টি নতুন ফর্কলিফট নিয়ে আসে। কয়েকদিন কাজ করার পর এসব ফর্কলিফট ও ক্রেণ অকেজো হওয়া শুরু করে। কিন্তুু মেরামতের কোন লক্ষণ দেখা যায় না। চুক্তি অনুযায়ী ৫টি বিভিন্ন ধারন ক্ষমতা ক্রেন ও ১১টি ফর্কলিফট দিয়ে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ করার কথা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ৬টি ক্রেন ও ৯টি ফর্কলিফট অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বাকী একটি ক্রেণ ও ২টি ফর্কলিফট দিয়ে কাজ করা হলেও সেটি প্রায় সময় অকেজো হয়ে থাকে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার জানানোর পরও এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেননি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও বন্দরের ঠিকাদার কোম্পানির দায়িত্বহীনতার কারণে বেনাপোল স্থল বন্দরে সকল প্রকার ভারি পণ্য লোড-আনলোড করা যাচ্ছে না। এ কারণে বন্দরের শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা পড়েছের চরম দুভোর্গের মধ্যে। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কাগজে কলমে এ বন্দরে একটি মাত্র ২৫-৩০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ফর্কলিফট রয়েছে, ২টি, ২০ টনের একটি, ১০ টনের একটি, ৫টনের ২টি, ও ৩ টনের ৫টি। ৪০-৪৫ টন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রেন রয়েছে একটি, ৩৫ টনের একটি, ২০-২৫ টনের একটি, ও ১০ টনের ২টি। ২টি ফর্কলিফট ও একটি ক্রেণ ছাড়া বাকী সব অকোজো হয়ে পড়ে আছে। বাকীগুলো চলছে আর অকেজো হয়ে পড়ছে। এর ফলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটছে মালামাল লোড-আনলোডে। ২০১৬ সালে বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারী কার্গো হ্যান্ডলিং এ নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য দরপত্র আহবান করা হলে আগের হ্যান্ডলিং ঠিকাদার মেসার্স এসআইএস (সীস) লজিস্টিক্যাল সিস্টেম (জেভি) উচ্চ আদালতে রীট করে। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় দরপত্র আহবান প্রক্রিয়া। ফলে কোম্পানী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জোড়াতালি দিয়ে আর এ কারণে এ পথে আমদানিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে বন্দর ব্যবহারকারীসহ ব্যবসায়ীরা।
বন্দর ব্যবহারকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, চুক্তি অনুযায়ী ইকুপমেন্ট হ্যান্ডলিং কোম্পানী নতুন কোন ইকুপমেন্ট এখানে দেননি। সবই পুরাতন। মাঝেমধ্যে মেরামতের জন্য যেসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয় তার অধিকাংশই পুরনো। ফলে মাস না ঘুরতেই ফের তা অচল হয়ে পড়ে। বন্দরে যেসব ক্রেন ও ফর্কলিফট ব্যবহার করা হচ্ছে তার অধিকাংশই ভাড়া করা দীর্ঘদিনের ও পুরাতন। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো রকম দায়সারা গোছের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। বন্দরের উর্ধতন কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বেনাপোল প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ইঞ্জিনের বিষয়তো, মাঝেমধ্যে সমস্যা হতে পারে। আমরা দ্রুত সব ক্রেন ঠিক করে দিচ্ছি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা জানান, ৩৮ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার বন্দরে প্রতিদিন