বাকেরগঞ্জে এসএসসি ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ
উত্তম কুমার, বাকেরগঞ্জ
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশ অমান্য করে বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। দরিদ্র শিক্ষার্থীরা অর্থাভাবে ফরম ফিলাপ করতে না পেরে চরম হতাশা আর অনিশ্চয়ায় ভূগছেন। এতে অভিভাবকরাও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১৫৯৫ টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০৫ টাকা ফরম পূরণ ফি নেওয়ার কথা; কিন্তু উপজেলার ১৭৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের ছোফরোননেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও নিয়ামতি ইউনিয়র মধ্য মহেশপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি ফরম পূরণের নামে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে। ওই সকল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ স্বয়ং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিরা এই অতিরিক্ত ফি আদায়ের সঙ্গে জড়িত। ফলে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেও কোনো ফল হচ্ছে না। ভুক্তভোগী অভিভাবকরা বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে যোগসাজশে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ ফি বাবদ সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৫ শত টাকা থেকে ৪ হাজার ৫ শত টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। তবে ওই ফি আদায় সংক্রান্ত কোনো রশিদ দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি অভিভাবকরা অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকদের প্রশ্ন করেও কোনো সদুত্তর পাচ্ছে না। অতিরিক্ত ফি আদয়ের বিষেয় ছোফরোননেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের ফাইনাল কোচিং ও বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত ফি নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও যে সকল শিক্ষার্থীরা সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ হয়নি তাদের কাছ থেকে বিষয় প্রতি ৫ শত টকা জরিমানা ফি আদায় করা হচ্ছে। তবে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ টাকা ধার্য করা হয়েছে। এ বিষয়ে মধ্য মহেশপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ৪জন শিক্ষক নিয়োজিত আছে। তাদের বেতন ও স্কুলের উন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে। অভিভাবকেরা অভিযোগ করে বলেন, বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে বিশেষ ক্লাসের নামে জোর পূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিদ্যালয়ে কোচিং বা বিশেষ কোনো ক্লাস শুরু হয়নি। তবে যারা একাডেমিকভাবে দুর্বল তাদের বিশেষ ক্লাসের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না করে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে। এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার আমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত অতিরিক্ত ফরম পূরণ ফি নেওয়া শিক্ষা নীতিমালার পরিপন্থি। কাজেই তদন্ত পূর্বক সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষকদের কোচিং, মডেল টেস্ট, উন্নয়ন ও বিবিধ খাতের ছদ্মনামে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকার চাহিদাপত্র। এ টাকা সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অভিভাবকদের। হাতে গোনা দুয়েকটি বাদে বাকেরগঞ্জের অধিকাংশ স্কুলে এ অর্থ বাণিজ্য চলছে। এভাবে চলতে থাকলে অচীরেই শিক্ষার মান ভেঙ্গে পড়বে। অতিরিক্ত ফি আদায়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।