শ্রীপুরে ক্ষেতে পোকার আক্রমণ কৃষকরা আগুনে পুড়াচ্ছে ধান গাছ
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
সারাদেশে এখন ধান কাটার ধুম। নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতি চলছে বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোদারচালা গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেনের চোখে মুখে বিষাদের ছায়া। কিভাবে সামনের দিন গুলো খেয়ে পড়ে বাঁচবেন। তাঁর কোন কূল কিনারা পাচ্ছেন না তিনি। কারণ তাঁর একমাত্র সম্বল চার বিঘা জমির আমন ধান পোঁকার আক্রমনে নষ্ট হয়ে গেছে।
একাধিকবার কীটনাশক ছিটিয়েও তিনি ফসল রক্ষা করতে পারেননি। একই এলাকার আরেক কৃষক হুমায়ুন কবির জানান, আমনে এরোগের আক্রমণ এত তীব্র যে ধান গাছ মরে খড়ে পরিণত হয়ে যায়। এসব খড় গবাদিপশুও খায় না। কীটনাশক দিয়ে সামলাতে না পেরে অনেকে আক্রান্ত ধান খেত আগুণে পুড়িয়ে দিচ্ছে।
আলতাফ হোসেন ও হুমায়ুন কবিরের মতো শ্রীপুর বহু কৃষক এবার ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাদামী খাস ফড়িং ও ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইটেড (বিএলবি)র হাত থেকে ধান ক্ষেত রক্ষা করতে না পেরে বাকী জমি সুরক্ষিত রাখার জন্য আক্রান্ত অংশ পুড়িয়ে দিচ্ছে কৃষকেরা। অন্তত ২০জন কৃষক জানিয়েছেন তারা গড়ে চার বিঘা জমির ধান পুড়িয়ে দিয়েছেন।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সাড়ে ১৩হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১২হাজার ৯শ’ত হেক্টর জমিতে উফসী জাত ও পঁচিশ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) এবং প্রায় ৫শ’ত হেক্টর জমিতে দেশীয় প্রজাতির ধানের চাষ হয়েছে। চলতি আমনের মৌসুমে আবহাওয়া অনূকূলে না থাকায় এবং অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকের ধানের জমিতে বিএলবি রোগ ও বাদামী ঘাস ফড়িং এর আক্রমণ হয়েছে। কৃষকের আসাবধানতায় অনেক জায়গায় এ রোগ থেকে ধানের জমিকে রক্ষা করা যায়নি। এ পোঁকা অতি দ্রুত সময়ে ধান গাছে আক্রমণ করে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ধানের শীষ বের আগে ও পরে ব্যাপক ভাবে রোগ দেখা দেয়। তাৎক্ষনিক ভাবে ব্যবস্থা নিয়ে অনেকে খেত রক্ষা করতে পেরেছেন। যেসব কৃষক রোগের লক্ষণ দেখে ব্যবস্থা নিতে দেরি করে ফেলেছেন তাঁরা একাধিকবার কীটনাশক প্রয়োগ করেও পোঁকার আক্রমণ থেকে ক্ষেত রক্ষা করতে পারেননি।
বিন্দুবাড়ি জিওসি গ্রামের আব্দুল হামিদ বলেন, এ সময়ে প্রতিবছর আমরা নবান্ন উৎসব পালন করি এবার পোকায় ধান নষ্ট করে দেওয়ায় আমাদের সামনে এখন অন্ধকার। কি খেয়ে বাঁচব তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছি না।
মাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের কৃষক আহাম্মদ আলী বলেন, প্রতিবছর আমরা আমন ধানের চাষ করে থাকি। এবার শুরু থেকেই ছিল প্রতিবন্ধকতা ছিল। প্রথমে বীজ সংকট, তাঁরপর আবার পোকার আক্রমণ।
সাতখামাইর গ্রামের কৃষক আব্দুস ছাত্তার বলেন, এবার পোকার আক্রমন এত বেশী ছিল যে, ফসলের মাঠে এখন ধান গাছ দাঁড়িয়ে আছে। শুধু ধান নেই। চাউলের দাম বৃদ্ধির কথা বিবেচনায় ধার দেনা করে তিন বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করে ছিলাম। পোকার আক্রমণে ধান না পাওয়ায় এখন শুধুই অন্ধকার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুুয়িদ উল হাসান বলেন, ১৫-২০দিন আগেও হঠাৎ প্রচুর বৃষ্টিপাত আবার গরম পড়ায় অর্থাৎ পরিবর্তিত আবহাওয়ার কারণে (দিনে প্রচন্ড গরম ও রাতে ঠান্ডা) ধান গাছে পাতাপোড়া রোগসহ বিভিন্ন রোগ বিস্তারের উপযোগী হয়। এ ব্যাপারে কৃষকদের সতর্ক করতে আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে স্কোয়াড গঠণ করে কৃষকদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছি। যারা ওই পরামর্শ মেনেছে তারা কিছুটা রেহাই পেয়েছে, যারা পালন করেনি তাদের ক্ষেতে রোগজীবানুর আক্রমণ প্রকোপ হয়ে থাকতে পারে। পরবর্তীতে যাতে ক্ষেতে ওই পোকার জীবাণু আক্রমণ করতে না পারে তার জন্য ক্ষেতের আক্রান্ত ফসল কিংবা ধান গাছের অবিশিষ্টাংশে (নাড়ার অংশে) আগুন দিয়ে দিয়েছে কৃষকরা।