জনবল সংকটে সৈয়দপুর রেল কারখানা
বিশেষ প্রতিনিধি :
দেশের বৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাটি জনবল সংকটে পড়েছে। আধুনিকায়নে রূপান্তর হলেও এই কারখানায় এখন থমকে যেতে শুরু করেছে রেলকোচ মেরামতসহ উৎপাদন কার্য়ক্রম।
তাই জনবল নিয়োগের দাবি নিয়ে আগামী ১৫ নভেম্বর জাতীয় রেল শ্রমিকলীগ সৈয়দপুর রেলকারখানার সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
সম্প্রতিকালে সৈয়দপুর রেল কারখানাটি বর্তমান সরকার ১৫৬ কোটি টাকায় ২৮টি শপের আধুনিকায়ন কাজ করেছে। প্রকল্পের আওতায় কারখানায় প্রায় ৪৫টির মতো নতুন মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে মেশিনগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।
জাতীয় রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক মোখছেদুল মোমিন জানান, বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নের রূপকার।
সৈয়দপুর রেলকারখানাটি আধুনিকায়ন করা হলেও এখন জনবল সংকট চরম আকার ধারন করেছে। জনবল সংকটে কারখানাটি বন্ধের উপক্রম হচ্ছে। এটি যাতে না হয় সে জন্য জরুরীভাবে জনবল নিয়োগের দাবি উঠেছে। এ জন্য মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ১৪৭ বছর আগে, ইংরেজ বেনিয়ারা সৈয়দপুরে প্রতিষ্ঠা করে বিশাল রেলওয়ে কারখানা, যা আজও বাংলাদেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা হিসেবে পরিচিত। ১৮৭০ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলপথকে ঘিরে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১১০ একর জায়গার ওপর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ১৯০৩ সালে কারখানাটি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়ি এবং স্টিম লোকোমোটিভ মেরামত কারখানায় রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালের দিকে কারখানায় বিভিন্ন মেশিন শপ স্থাপন করে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি মেরামত ও সংশিষ্ট যন্ত্রাংশ উৎপাদনের সুবিধাসহ পূর্ণাঙ্গ কারখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
সৈয়দপুর কারখানায় আছে ২১টি শপ (উপকারখানা)। কারখানাটি পশ্চিম রেলের ব্রডগেজ ও মিটারগেজ রেলপথের যাত্রীবাহী বগি (ক্যারেজ), মালবাহী বগি (ওয়াগন) এবং পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের স্টিম রিলিফ ক্রেনের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ এবং আয়ুষ্কাল ঠিক রাখার পাশাপাশি কোচের গতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া এখানে ক্যারেজ, ওয়াগন ও লোকোমোটিভের ১ হাজার ২০০ রকমের খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরির সমতা আছে।
রেলওয়েকে আলাদা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে যখন ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে সম্পৃক্ত হয়ে একটি যথার্থ পরিবহন মাধ্যম হিসেবে দেশ-বিদেশে সম্প্রসারিত হয়েছে।
ব্রডগেজ ও মিটারগেজ উভয় ধরনের কোচ ও ওয়াগন মেরামতে রেলের প্রধান ভরসা সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা।
১৯৯১ সালে রেলওয়ে রিকভারি প্রোগ্রামের আওতায় রেলওয়ের লোকবল ৫৮ হাজার থেকে ৩৫ হাজারে নামিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে সৈয়দপুর রেল কারখানায় শ্রমিক সংকট তীব্র হয়ে উঠে।
কারখানায় মঞ্জুরীকৃত ৫৬% শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও নতুন লোকবল নিয়োগের কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ৩৭০ জন মঞ্জুরীকৃত খালাসি পদে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৯৮ জন। শ্রমিকের অভাবে কাজের পরিধি কমে যাওয়ায় যে অল্পসংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছে, তারাও অলস সময় পার করছে।
কারখানায় নিয়োজিত অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বয়স ৫০-এর উপরে চলে গেছে। এর মধ্যে কর্মকর্তাদের শতকরা ৭০ ভাগ, আর কর্মচারীদের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগের বয়স ৫০-এর উপরে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১০০, ২০১৯ সালে ১৩০ এবং ২০২১ সালে ১৫০ জন অবসরে যাবে।
এতে করে কারখানায় বিদ্যমান জনবল সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করবে।