বেগুন ক্ষেতে ফলন বেশ ভালো কৃষকের মুখে হাসি
শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত,লালমনিরহাট প্রতিনিধি,
দুই দফা বন্যার পর এই প্রথম লালমনিরহাটে চাষীদের মুখ হাসি এনে দিয়েছে বেগুনের দাম। বাজারে নয়, ক্ষেতেই প্রতি মণ বেগুন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার দুইশ’ টাকায়। ক্ষেতে ফলনও বেশ ভালো হচ্ছে। সব মিলে কৃষকরা এবার বেগুন চাষে ভীষণ খুশি। বেগুন চাষে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি জেলার মানুষের আয়ও বেড়েছে। ভাগ্যের পরিবর্তনও করে নিয়েছেন অনেকেই।
কিছুদিন আগেও যাদের পেটের ভাত জোটানো নিয়ে চিন্তা ছিল, তারাও এখন সচ্ছল। পাল্টে গেছে জীবন-যাত্রার মানও। জেলার হাট-বাজার গুলো ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে প্রতি মণ বেগুন বিক্রি হয়েছে আটশ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকায়। প্রচুর আমদানী হওয়ার পরও এক সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার দুইশ’ টাকায়।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামে সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ সবজি ক্ষেতের সমারোহ। যার মধ্যে বেগুন ও মুলা বেশি। এ বছর জেলার বাইরে চাহিদা প্রচুর থাকায় বিক্রিতে যেমন ঝামেলা নেই চাষীদের, তেমনি অনেক বেশি মুনাফাও। যেনো বেগুনের গুণে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে মুখে। তাদের পাশাপাশি কাজে ব্যস্ত দিনমজুর কৃষি শ্রমিকরাও।
জেলার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন বছর ধরে টানা বৃষ্টিতে অকালে গাছ মরে যাওয়ায় বেগুন চাষাবাদে কিছুটা লোকসান গুণতে হলেও এ বছর তা পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন তারা। লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ বছর ১১০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের বেগুনের চাষ হয়েছে। মৌসুম চলমান থাকায় রোপণ চলবে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত।
গত বছর এ জেলার এক হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে চাষ করে ২৬ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন বেগুন উৎপাদিত হয়েছে। কাচাঁমাল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা ক্ষেত থেকেই কিনে সারা দেশে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন গ্রামে ঘুরে বেগুন কিনে ট্রাকে ভরে বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
বড় কমলাবাড়ি গ্রামের বেগুনচাষি মাজেদ আলী বলেন, গত বছর দেড় বিঘা জমিতে চাষ করেছিলাম। কিন্ত ঘনবৃষ্টিতে গাছ মরে যাওয়ায় লোকসান হয়েছে। এ বছর দুই বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছি। ফলনও ভালো হচ্ছে। প্রতি ৫/৭ দিন পর পর বেগুন উঠছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, সারাদিন গ্রাম ঘুরে বেগুন কিনে ট্রাকে ভরে রাতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পাঠাই। পরদিন সকালে বেগুন বিক্রি হয়ে ট্রাক চালকের মাধ্যমেই টাকা চলে আসে। কোনো ঝামেলা ছাড়াই এ বছর ব্যবসা করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিধূ ভুষণ রায় জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের পাশাপাশি জেলার বাইরে প্রচুর চাহিদা ও দাম বাড়ায় বেশ লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। গত তিন বছরের ক্ষতি এবার পুষিয়েও নিতে পারছে কৃষকরা।